রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজারে বাড়ছে এইডস

৭ বছরে ৬১২ জন রোহিঙ্গা ও ৯৮ জন স্থানীয় নাগরিক আক্রান্ত

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশের পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এইচআইভি (এইডস) ভাইরাসের প্রকোপ। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত জুন মাসেও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। চিকিৎসকরা বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৭১০ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন ৫০৫ জন। উখিয়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ২০৫ জন। এদের মধ্যে ৬১২ জন রোহিঙ্গা ও ৯৮ জন স্থানীয় নাগরিক। এপর্যন্ত মারা যাওয়া ১১৮ জনের মধ্যে ৬১ রোহিঙ্গা এবং ৫৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা।
চিকিৎসকদের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে, এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যাই বেশি। রোহিঙ্গাদের অসচেতনতার কারণে তাদের কাছ থেকে এই রোগ কক্সবাজারের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার কারণে এই রোগের সংক্রমণ কক্সবাজারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে অনাক্সিক্ষত নারী-পুরুষ ছাড়াও রয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। এ কারণে এই রোগটি কক্সবাজারে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তাদের মতে রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমার থেকেই এইচআইভি ভাইরাস বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।
এ ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমন এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আক্রান্তের তালিকায় শুধু যুবক-যুবতী নয় আছে শিশুরাও। এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে ভাসমান যৌনকর্মী ছাড়াও প্রবাসী অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। তারাও এই ভাইরাস সক্রামকের তালিকায় রয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গারা যেহেতু কক্সবাজার এলাকা জুড়ে রয়েছে; সেহেতু তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের মেলামেশা হচ্ছে। এমনকি যৌন সম্পর্কেও জড়াচ্ছে অনেকে। এ ছাড়াও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় রোহিঙ্গা নারী ছাড়াও যৌন কর্মীরদের রয়েছে অবাধ বিচরণ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান জানান, আমরা সবসময় চেষ্টা করছি রোহিঙ্গাদের সুন্দর স্বাস্থ্য সুরক্ষায়। রোহিঙ্গারা আসার আগে এই রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন ছিল না। তাদের কাছে এইচআইভি রোগের প্রাদুর্ভাব থাকার কারণে ও তাদের অবাধ মেলামেশা এবং এক জায়গায় বেশি সংখ্যক জনবল হওয়ার কারণে এইচআইভি ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা না করার কারণে এই রোগ আরও ব্যাপকভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা রাখতে হবে। তাদের যদি আলাদা করা না হয় তবে দেশের জন্য এটি বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তবে এ নিয়ে জাতীয় এইডস এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এইডস-এসটিডি) কাজ করছে। এই প্রোগ্রামে এটিকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। এই চ্যালেঞ্জে রয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন