রোগী প্রতি বছরে মাত্র ৯ ডলার খরচ করেই দেশব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্টঅ্যাটাক ঝুঁকির প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ, যা প্রতিরোধযোগ্য। সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, শারীরিক পরিশ্রম অত্যন্ত কম এমন জীবনাচরণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের বোঝা আগামী বছরগুলোতে বাড়বে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সম্প্রসারণ করা হলে অল্প ব্যয়ে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। গতকাল রাজধানীর প্যান পাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে ‘বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভস’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচি, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস।

বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ‘রিজলভ টু সেভ লাইভস’-এর সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। অত্যন্ত সফল এই প্রাথমিক প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করা হলে দেশে স্বল্প খরচেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল হওয়ার মত ব্যয়বহুল রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে অসংখ্য জীবন বাঁচানো সম্ভব।
রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রাক্তন পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপজনিত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অসংখ্য জীবন বাঁচানোসহ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সাধারণ ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৯ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন এবং ১৪ শতাংশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ত্রিশ শতাংশই ঘটে হৃদরোগের কারণে। স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয় অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায়। দেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন পরিচালিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ইতিমধ্যে টাস্ক-শেয়ারিং এবং টিম-ভিত্তিক সেবা প্রদানের নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করে সফলতার মুখ দেখছে, বলে মন্তব্য করেছেন প্রফেসর ডা. মো. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, দুই বছরের ব্যবধানে ১ লাখেরও বেশি রোগী নিবন্ধন করেছে -অর্থাৎ মাসে গড়ে চার হাজারেরও বেশি নতুন রোগী নিবন্ধিত হয়েছে। সেবা গ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশই রক্তচাপ নিয়েন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছেন। সাফল্যের এই হার জাতীয় গড়রে তুলনায় চারগুণ।