স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিগত ১৯ ডিসম্বের উভয় দেশের মাঝে কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি সইয়ের পর দেশটিতে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাছাড়া, বৈধ পথে কর্মী পাঠাতে গ্রিসের সঙ্গেও একটি চুক্তি সই করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এসব তথ্য জানান।
প্রবাসীমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার কর্মী যাওয়া শুরু হচ্ছে। এ বছরের মধ্যে ১ লাখ না ২ লাখ যাবে, তা নির্ভর করবে আমরা কত দ্রুত পাঠাতে পারি তার ওপর। আবার মালয়েশিয়া থেকেও চাহিদা আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘গ্রিসের সঙ্গেও আমরা চুক্তি করেছি। ইউরোপীয় শ্রমবাজারের জন্য এটিই প্রথম চুক্তি। গ্রিসের বিষয়ে আমরা খুব বেশি আগ্রহী ছিলাম কারণ, যারা সেখানে যাবেন তারা যেন বৈধ পথে গিয়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারেন। ‘আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি করে শ্রমবাজার আরও উন্মুক্ত করতে পারবো।’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিলনায়তনে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলম।
এদিকে, সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৭টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১ হাজার কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৬৮টি মেডিক্যাল সেন্টারকে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুমোতি দেয়া হয়েছে। ফলে আগামী আগষ্ট মাসেই মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, উভয় দেশের সম্মতিক্রমে জনশক্তি রফতানি শুরু হলে এবার মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী যেতে পারবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মী।
প্রবাসী কর্মীর অভাবে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিরা রয়েছে। বর্তমানের দেশটিতে ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশি অনেকে রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহের জন্য বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর ফ্যাক্টরীগুলো পরিদর্শন করে যাচাই বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় গত দেড় মাস যাবত নেপাল থেকে প্রচুর কর্মী মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। কুয়ালালামপুর থেকে এ জ্ডে গ্লোবাল এসডিএন বিএইচডি’র ডিরেক্টর ও আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার সহ সভাপতি দাতো মো. আক্তার হোসেন ইনকিলাবকে জানান, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫শ’ রিংগিট এবং দেশটির শ্রম আইন অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে তারা। তিনি বলেন, দেশটির ইমিগ্রেশন থেকে দেড় লাভ অ্যাপ্রুভাল বের হয়েছে। কিন্ত এর অধিকাংশই নেপাল থেকে কর্মী আসতে শুরু করছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণে মাসের পর মাস বিলম্ব হওয়ায় দেশটির বিভিন্ন কোম্পানী পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতের দিকে ঝুঁকছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী দাতো আক্তার হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দ্রুত ধরে রাখতে না পারলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশি কর্মীরা। তিনি বলেন, কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় আমার কোম্পানীর ৪শ’ কর্মীর চাহিদা বর্তমানের নেপাল থেকে পূরণ করতে বাধ্য হয়েছি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীন সম্প্রতি তার দপ্তরে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া শুরু প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, রোববার ৭টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দেশটিতে প্রায় ১ হাজার কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসী কর্মী নিয়োগের অনলাইন সিস্টেম এফডব্লিউসিএমএসকে এসব নিয়োগানুমতি বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। শিগগিরই দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলেও প্রবাসী সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সচিব বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে কর্মী প্রতি অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের মাধ্যমেই কর্মী পাঠাতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়ার কোম্পানীগুলো বাংলাদেশি কর্মীদের আসা যাওয়ার বিমান টিকিট প্রদান করবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে।
সচিব বলেন, কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করেই দেশটিতে জনশক্তি রফতানি করতে হবে। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের অতিরিক্ত কোনো এজেন্সি টাকা নিলে অভিযুক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করা হবে বলেও প্রবাসী সচিব উল্লেখ করেন। প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে যে ৭টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অনুমতি লাভ করেছে তা’হচ্ছে, মেসার্স নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল (১৫০ জন), অরবিটাল (৭০জন), মেসার্স আমিয়াল ইন্টারন্যাশনাল (১৫০), গ্রীনল্যান্ড ওভারসীজ (১০০ জন), পাত ফাইন্ডার (৭০ জন), আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, সাউথ পয়েন্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন