বন্ধুরা মিলে কিছুক্ষণ মোটরসাইকেলে ঘুরবেন, শেষে সবাই জড়ো হবেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে জমিয়ে আড্ডা তুলবে। থাকবে ফুচকা-চটপটি খাওয়ার প্রতিযোগিতা। শুক্রবার ক্লাস নেই। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাতে এমন আড্ডা জমানোর পরিকল্পনা ও প্রস্তুুতি নিয়ে রেখেছিলো ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী মাহতাব আহমেদ তাসিন (১৭)। কেরানীগঞ্জ শাখার দশম শ্রেণির ছাত্র সে। রাতের আড্ডার পরিকল্পণা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলেও বন্ধুদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়। নিজের মোটরসাইকেল না থাকায় তাসিন কারো কাছ থেকে বিকেলেই একটি মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে আর আড্ডায় যোগ দেয়া হলো না তার। রাত ১০টার যখন শহীদ মিনারে থাকার কথা তাসিনের, ঠিক ওই সময় তার অবস্থান ছিলো শহীদ মিনার সংলগ্ন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। স্ট্রেচারে, লাশ হয়ে। এর মাত্র আধা ঘন্টা আগে রাজধানীর পল্টনের স্টেডিয়াম এলাকায় পুলিশের রেকারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় মোটরসাইকেল আরোহী তাসিন। হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, সহপাঠী ও বন্ধুদের মধ্যে চরম শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ রেকার চালককে শনাক্ত করতে না পারায় নিহতের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে পল্টন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ৩ নম্বর গেটের সামনে দূর্ঘটনার শিকার হন তাসিন। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন নুর হোসেন নামে এক পথচারী। তিনি তাসিনকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। নুর জানান, স্টেডিয়ামের তিন নং গেটের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের রেকার গাড়ি চাপা দেয় তাসিনকে। চোখের পলকেই রেকারটি হাওয়া হয়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাসিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তাসিনের বন্ধু আরিয়ান আহমেদ কাউসার জানান, রাতে বন্ধুরা সবাই মিলে কয়েকটি মোটরসাইকেলে শহীদ মিনার এলাকায় আড্ডা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধুরা তাসিনকে কল দিচ্ছিল। তবে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই তার দুর্ঘটনার খবর আসে।
তাসিনের মা কাকলী আক্তার বলেন, তাসিন বিকেলে বাসা থেকে বের হয়। তার কোনো মোটরসাইকেল নেই। তার কোনো বন্ধুর মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল সে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাসিনকে চাপা দেয়া পুলিশের রেকারটি কিংবা এর চালককে শনাক্ত করতে পারেনি বলে জানিয়েছে পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, তাসিনের মৃত্যু ঘটনায় তার পরিবার থেকে গতকাল সড়ক আইনের ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এতে পুলিশের রেকারের অজ্ঞাত চালককে আসামি করা হয়েছে। ওসি আরো বলেন, গতকাল শুক্রবার থাকায় ঘটনাস্থলের আশ পাশের দোকানপাট বন্ধ ছিল। যে কারণে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে রেকারের চালককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি।
এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে দাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছেন তার স্বজনরা। তাসিনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মনদগাও গ্রামে। তার পরিবার বর্তমানে ওয়ারী বলদা গার্ডেনের সামনে একটি বাসায় ভাড়া থাকে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তাসিন ছিল দ্বিতীয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন