বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সঙ্কটগুলোর একটি হলো এইচআইভি ভাইরাস। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ গত বছর নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদে এর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এইডস প্রতিরোধে আগে মূলত রোজ ওষুধ খাওয়ার কথা বলা হত। তবে নতুন এই ইঞ্জেকশন আগের ব্যবস্থার তুলনায় অনেকটাই কার্যকরী হচ্ছে। এতে দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ এবার কিছুটা সস্তা হতে পারে। মূলত দরিদ্র দেশগুলোতেও যাতে এই চিকিৎসার জন্য জেনেরিক ওষুধ মেলে তারই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ ওষুধ তৈরির কোম্পানি জিএসকে এ নিয়ে চুক্তিও করেছে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যাতে কবোটেগরাভির জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তার ব্যবস্থা করা যাবে। এই ধরনের ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হলে অন্তত দু’মাসের জন্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অন্তত ৯০টি দেশে এই ওষুধের প্রয়োগের ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এইডস প্রতিরোধে আগে মূলত রোজ ওষুধ খাওয়ার কথা বলা হতো। নতুন এই ইঞ্জেকশন আগের ব্যবস্থার তুলনায় অনেকটাই কার্যকরী হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, নতুন করে এইচআইভি এইডসের সংক্রমণের ৭০ শতাংশই এসব দেশে হয়।
গতকাল কানাডায় শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক এইডস কনফারেন্সে এসব তথ্য দেয়া হয়।
ইউনিটেডের মুখপাত্র হার্ভে ভেরহুসেল বলছেন, এই বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ থামানোর দিকে আমরা এগিয়ে যাব। ২০৩০ সালের মধ্যে এই এপিডেমিকের শেষ হতে পারে। এদিকে মূলত সমকামী ও যৌন কর্মীদের মধ্যে যাতে এই রোগ না ছড়ায় সেক্ষেত্রেও কার্যকরী হতে পারে এই বিশেষ চিকিৎসা।
এদিকে বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিচারে এখনো বেশি না হলেও এইডস রোগীর সংখ্যা আক্রান্তদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডস। সংস্থাটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। ইউএনএইডসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে দেশে চিকিৎসার আওতায় রয়েছে মাত্র আট হাজার রোগী।
এই আক্রান্ত হয়ে গত বছরে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। তবে বিশ্বব্যাপী আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের ফলে এইডসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। এখন সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এইডস আক্রান্ত হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। পাশাপাশি নতুন করে ইঞ্জেকশন আবিস্কার করায় এর প্রয়োগে অন্তত দু’মাসের জন্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এইডস রোগ প্রতিরোধে কাজ করে, এমন একটি সংগঠন বাংলাদেশ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটিং মেকানিজমের (বিসিসিএম) সদস্য হাফিজ উদ্দিন মুন্না বলছেন, আয়ু বাড়া কমার বিষয় নয়, একটা মানুষ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা পায়, চিকিৎসা নেয়, তিনি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো খুব সাধারণভাবে থাকতে পারে। আপনি কখনোই কাউকে দেখে শনাক্ত করতে পারবেন না, এই লোকটা এইচআইভি পজিটিভ কিনা।
বাংলাদেশে সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই সেবা নেয়ার সুযোগ এখনো নেই। এইডস শনাক্ত করার জন্য সারা দেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে আর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে। বাংলাদেশের সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, যাদের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৮৪ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে পারছে। বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ।
এদিকে এইডসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেন। তবে তাদের নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করতে হয় এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। তবে কারও যদি এইডসের পাশাপাশি অন্য কোন শারীরিক জটিলতা থাকে, তাহলে তার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেই রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।
হাফিজ উদ্দিন মুন্না বলছেন, বাংলাদেশের সরকার এইডস রোগের চিকিৎসায় অনেক চেষ্টা করছে, কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যান্য যেসব সেবা দরকার, যেমন তাদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এবং মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ওই জায়গায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। অনেকে আবার কিছুদিন পর ওষুধ ছেড়ে দেন বা নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যান। এটা কিন্তু চিকিৎসার জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করে। পাশাপাশি যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। তাদের খাবার, কর্মসংস্থান, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন দরকার। কিন্তু সেটাও এখানে হচ্ছে না। অনেকের এইচআইভি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, সেটার চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য আলাদা খুব বেশি সুবিধা নেই।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন