শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পূর্ত প্রকৌশলীর দুর্নীতি অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক চাকরি করেন বাংলাদেশে!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:১৩ এএম

নাগরিকত্ব অস্ট্রেলিয়ার। সেখানে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাসও করছেন। অথচ চাকরি করছেন বাংলাদেশে। সরকারি চাকরির পাশাপাশি নিজ দফতরেই বেনামে চালাচ্ছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। এভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বিদেশে। দেশে নামে-বেনামে করেছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। গুরুতর এই অভিযোগ গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদফতরের সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধকায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়েরকৃত অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে এসব তথ্য।

দুদক সূত্র জানায়, জিকে শামীমকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম সিন্ডিকেটের ১১ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এ কারণে জিকে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় অন্যান্যদের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, আব্দুল মোমেন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মো. ফজলুল হক, আব্দুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, মো. ইলিয়াস আহমেদ, ফজলুল হক, গণপূর্ত-৪ সার্কেলের তৎকালীন উপ-সহকারি প্রকৌশলী আলী আকবর সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দুদক পরিচালক (বিশেষ অনুঃতদন্ত-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর আগে জিকে শামীম কানেকশনে রোকন উদ্দিনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। কারণ জিকে শামীমকে সবচেয়ে বেশি টাকার কার্যাদেশ দেন রোকন উদ্দিন। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় জিকে শামীমের মামলায় রোকন উদ্দিনের তেমন কিছুই হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের পৃথক অভিযোগ। প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের ফাইলটি কোন পর্যায়ে রয়েছে-জানতে চাইলে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, ফাইলটি দেখে আপডেট জানাতে পারবো।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সার্কেল-৩-এ যোগ দেন। এর আগে তিনি বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। আগারগাঁও অফিসে যোগদান করেই তিনি তার শ্যালক মো. সাইফুল আলমের নামে লাইসেন্স নেয়া ‘মমতা ট্রেডার্স’র এবং ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন মিটুর নামে লাইসেন্স নেয়া ‘মুন্সি ট্রেডার্স’কে কার্যাদেশ দেন। এ দু’টি মূলত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনেরই বেনামী প্রতিষ্ঠান। এখানকার দায়িত্বে এসে শুধু মহাখালী ডিভিশন থেকেই প্রতিষ্ঠান দু’টিকে কয়েক শ’ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেন। এর মধ্যে শেরেবাংলা নগরে ২টি প্যাকেজে ১৮ কোটি টাকা, ৩টি প্যাকেজে ৫ কোটি টাকা এবং আরও একটি প্যাকেজে ৮ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেন। এখান থেকে তিনি নিজের বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেন।

এর আগে রোকন উদ্দিন ছিলেন বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী। সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক ঠিকাদার রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ঘুষ ছাড়া কাউকে কোনো কার্যাদেশ দেন না। ঘুষ না দিলে টেন্ডার নোটিশ গোপন করে বাগেরহাটের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেন। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল বাগেরহাট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জাহিদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক শেখ জাহিদুর বারী রোকন উদ্দিনের বিভিন্ন দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) তালিকায় বাগেরহাট পিডব্লিউডি’র তালিকায় ৯২টি কাজ ছিল। নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অংকের উৎকোচ নিয়ে কার্যাদেশ দেন। বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধা অফিসের এলটিএম পদ্ধতিতে একটি গ্রুপ টেন্ডার করে ৩টি কার্যাদেশ দেন ঢাকার মেসার্স এস. কে পাওয়ার সার্ভিসকে। ২০১৪-১৫ সালে বাগেরহাট পিডব্লিউডি’র অনেক কার্যাদেশ দেন একই প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদার শেখ জাহিদুল বারী অভিযোগ করেন, বাগেরহাট গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে রোকন উদ্দিন যোগদানের পর তিনি পিকনিকের জন্য আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিনিময়ে তিনি আমাকে ৬টি কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলেন। কথামতো তাকে প্রথম ৮০ হাজার টাকা দিই এবং তিনি আমাকে ২টি কার্যাদেশ দেন। পরে আরও চারটি কাজের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও আর কোনো কাজ দেননি। আমার টাকাও ফেরত দেননি।

বাগেরহাটের ঠিকাদার আলমগীর কবির প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে আর কার্যাদেশই দেননি। প্রচন্ড অর্থকষ্টে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করেন। ঠিকাদারি পেশায় তিনি এখন পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেননি। আলমগীর কবির ভুক্তভোগী আরও ১০ ঠিকাদারের স্বাক্ষর নিয়ে রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গণপূর্ত সার্কেল, খুলনা বরাবর দাখিল করায় তিনি এই রোষানলের শিকার হন।

অভিযোগের তথ্য মতে, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন মালিক হয়েছেন বিপুল অবৈধ অর্থ সম্পদের। এই সম্পদ রয়েছে নামে-বেনামে। ইতোমধ্যেই অনেক অর্থ তিনি হুন্ডির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছেন। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান বসবাস করছেন। রোকন উদ্দিন নিজেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং পাসপোর্ট (এন৮৩৭০২৭৬) হোল্ডার। ওই পাসপোর্টে তার নাম মুন্সি মো. রোকন উদ্দিন। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের তার অফিসিয়াল পাসপোর্টের (নং-ওসি৪১৫৭১৪৮) ভিত্তিতে। ফলে দুদকের নিষেধাজ্ঞার পরও তিনি একাধিকবার অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করেন। গত ৮ বছর ধরে তিনি ২টি পাসপোর্টই ব্যবহার করছেন-মর্মে উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের সঙ্গে গতকাল রোববার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অভিযোগে ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ এবং অর্থ পাচারের উপকরণ থাকলে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। দুদক নিশ্চয়ই সেটি খতিয়ে দেখবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
তানবীর হাসান তনু ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫১ এএম says : 0
সাব্বাশ, ভাগিনা সাব্বাশ !
Total Reply(0)
Rezaul Karim Reza ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫১ এএম says : 0
আহ! আমাদের কত সু্-ভাগ্য!
Total Reply(0)
Mohsin Sarker ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫১ এএম says : 0
এদশের ৩০লাক সরকারি চাকরি জীবির যে পরিমান সম্পদ বাকি বেসরকারি কোটি কোটি চাকরি জীবির চেয়ে বেশি , বিশ্বের ধনী চাকরিজীবি বাংলাদেশ সরকারি চাকরিজীবি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন