ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর থেকে বিদ্যমান খাদ্য সঙ্কট ও মূল্যস্ফীতি আরো প্রকট হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা জানিয়েছে, পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে অনেক দেশের বার্ষিক জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে যেখানে অন্য দেশসমূহ এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়াসহ ঋণ সঙ্কটে নিমজ্জিত হতে পারে।
আমদানিকৃত খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ গত সপ্তাহে আন্তর্জতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছে আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রয়োজন যেখানে আইএমএফ মাত্র ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
নগদ অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনের নিকট আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছে। অপরদিকে পাকিস্তান তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য জুন মাসে আইএমএফ এর সাথে ৬ বিলিয়নের ঋণচুক্তি করেছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। উচ্চ আয়ের দেশও প্রায় ৭৮.৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো হল আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া।
সংস্থাটি ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালিসহ শস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখাসহ আবহাওয়া সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
২০২০ সালে বৈরুতে খাদ্যশস্যের দোকানে বিস্ফোরণের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে লেবানন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা এই দেশটির ৬.৮ মিলিয়ন মানুষের ভুট্টা এবং গম ধারণ ও বিতরণ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
জিম্বাবুয়েতে ২৫৫ এবং ভেনেজুয়েলায় ১৫৫ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত জুনে লেবাননে ৩৩২ শতাংশ ছুঁয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ৯৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল তুরস্ক।
লেবাননের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং সাধারণ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ব্যবধান একটি ‘বাস্তব খাদ্য মূল্যস্ফীতি’-এর চিত্র তৈরি করে। মূলত জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি লেবাননের সাধারণ মুদ্রাস্ফীতির হারকে ১৫০ শতাংশের ওপরে ঠেলে দিয়েছিল।
গত মাসে তুরস্ক এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য বহনকারী জাহাজগুলোকে ইউক্রেনীয় বন্দর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় যা পণ্যের দাম কমাতে সহায়তা করে।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে জুন থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দামে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেছে এবং অন্যান্য কৃষি পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় নিচে নেমে এসেছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন