সন্ত্রাসী ও পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের প্রথম দিনেই দুই শতাধিক স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দখলমুক্ত করা হয়েছে সাতশ একর জমি। প্রশাসনের তরফে, আগামী এক মাসের মধ্যে পুরো এলাকা দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খুব শিগগির সেখানে পুলিশ ও র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করার প্রস্তুতিও চলছে।
পাহাড়, টিলা ও সবুজ বন-বনানীতে ঘেরা ওই বিশাল এলাকাকে ঘিরে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। সেখানে বিশ্বমানের স্পোর্টস কমপ্লেক্স হবে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হবে। নির্মাণ করা হবে মডেল ও আইকনিক মসজিদ। থাকবে জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটার ও ইকোপার্ক। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে পুরো এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জঙ্গল সলিমপুর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নির্বিচারে পাহাড়, টিলা কেটে সেখানে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান ও পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের নেতৃত্বে র্যাব, পুলিশের কয়েকশ সদস্য উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়। দিনভর অভিযানে জঙ্গল সলিমপুর এলাকার অলীনগরের বিভিন্ন স্পটে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা দুই শতাধিক অবৈধ স্থাাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযানের একপর্যায়ে দখলদারসহ সেখানকার বাসিন্দারা উচ্ছেদে অংশগ্রহণকারীদের ঘেরাও করে ফেলে। সড়ক অবরোধ করে তারা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করে। এতে কয়েক ঘণ্টার জন্য আটকা পড়েন প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ মিডিয়া কর্মীরা। পরে অবশ্য বড় ধরনের কোন ঝামেলা ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান শেষ করা হয়।
অভিযান শেষে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, জঙ্গল সলিমপুরের অলীনগরে অন্তত দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করে ফেরার সময় ওই এলাকার কিছু বাসিন্দা প্রতিবাদ জানায়। তবে তারা কোন সমস্যা করতে পারেনি। অভিযানে সন্ত্রাসী ইয়াসিনের আস্তানাও উচ্ছেদ করা হয়।
অভিযানের শুরুতে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও নগরায়ণে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর একটি আদর্শ স্থান। চট্টগ্রাম শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কি.মি.। এখানে পাঁচটি মৌজায় মোট খাস জমির পরিমাণ প্রায় তিন হাজার একশ একর। কিন্তু কতিপয় ভূমিদস্যু ৯০ দশক থেকে এখানে পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে আসছে। জঙ্গল সলিমপুর অলীনগর পাহাড়ি এলাকার সরকারি পাহাড় কেটে তারা অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ প্লটগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ ও অপকর্ম করে আসা সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করেছে এসব ভূমি দখলদাররা। এসব অবৈধ প্লট ২০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকায় বিক্রি করারও তথ্য রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, আগামী একমাসের মধ্যেই জঙ্গল সলিমপুরের অলীনগরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর সেখানে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনা, তথ্য ভবন, কেন্দ্রীয় কারাগার, সাফারি পার্কসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। আর যেসব পাহাড় কাটা ছাড়া অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করা হবে। একইসাথে প্রকৃত ভূমিহীনদের যথাযথভাবে পুনর্বাসন করা হবে। জানা গেছে, সেখানে অন্তত ৩০ শতাংশ পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, খুব শিগগির সেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এ এলাকায় কোন সন্ত্রাসী ও দখলদারের স্থান হবে না। উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এসানুল হক বাবুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন