বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ২০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল বুধবার রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য এ সহায়তা চায়। তবে রয়টার্সের অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির ঋণ সহায়তার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি বাংলাদেশ অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে গত ২৭ জুলাই অর্থশন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, শুধু আইএমএফ নয়, দাতারা কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, আমরা সেটা দেখব। তারা যদি ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসে এবং কম সুদহারে পাই, তাহলে আমরা ঋণ নেব। আমরা বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র কাছেও যাব।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যদি সবসময় বলি টাকা লাগবে, এতে করে আমাদের চাহিদা প্রকাশ পায়। আইএমএফ টিম যখন ঢাকায় এসেছিলে, সে সময় যদি বলি আমাদের টাকা দরকার, তখন তারা টাকা দিলেও সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই, আমরা ভাব দেখাই আমাদের দরকার নেই, এটাই হলো মূল কথা। সে কারণে সে সময় বলিনি আমাদের ঋণ প্রয়োজন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনও আমাদের অর্থনীতির খারাপ কোনও অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। আমরা যখন অর্থনীতি ম্যানেজ করি, আমাদের বিভিন্ন পারসপেক্টিভ (পরিপ্রেক্ষিত) দেখতে হয়। আমাদের ঋণ দরকার। আর কিছু দিন, এরপর ঋণ থাকবে না। আমরা তো বলেছিলাম-ঋণ দেবো। আমি আবারও বলি আমরা ঋণ দিতে পারবো।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন পরিচিত ব্যক্তিদের বরাতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এ দুই ঋণদাতার প্রত্যেকের কাছে ১০০ কোটি করে ঋণ সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশের মধ্যে একটি। যার অর্থনীতির আকার ৪১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের আমদানি ও চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ সরকার বাজেট এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছে ৪৫০ কোটি ঋণ সহায়তা চায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদটি প্রকাশের পরই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে ঋণ সহায়তার সংবাদটি সামনে আসে। গত সপ্তাহে আইএমএফ জানায়, ঋণ সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করবে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার পাশাপাশি রেমিটেন্সের প্রবাহ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১ হাজার ৭২০ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ে এ হার ছিলো ২৭৮ কোটি ডলার।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে ঢাকার সরকার আইএমএফের কাছ থেকে আর্থিক উদ্ধার প্যাকেজ চেয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় রপ্তানি কমে গেছে। এদিকে উচ্চ আমদানি মূল্যের কারণে ভীষণভাবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে তারা ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্যাকেজের কথা জানিয়েছে আইএমএফের কাছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা এক বছর আগে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। সবশেষ অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সরকার করোনাভাইরাস মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুণরুদ্ধারের জন্য এডিবির কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহ কমপক্ষে চারটি প্রকল্পের প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বিধ্বস্ত বন্যার পরে পুর্ননির্মাণে সহায়তা করার জন্য আরেকটি প্রকল্পের জন্য ঋণ হিসাবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক মাসের মধ্যে ভোক্তাদের দামের ওপর চাপ কমবে এবং টাকা স্থিতিশীল হবে। এছাড়া অর্থনীতি খুব শীঘ্রই স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে বলে আশা করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন