শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নয়াপল্টনে জানাজায় জনস্রোত

ওসিসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৬ এএম

ভোলায় বিএনপির অর্ধদিবস হরতাল পালিত : ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
আ. রহিম-নূরে আলমসহ সকল হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে : মির্জা ফখরুল :: আব্দুর রহিম-নূর আলমের রক্ত ছুঁয়েই বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার ঘোষণা
প্রচন্ড দাবদাহে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ অবস্থায় কৃচ্ছ্রতার নামে লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। এই লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই নেতা নিহত হন। এর প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। এই হত্যাকান্ডে প্রতিবাদে ৩১ জুলাই থেকেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে গতকাল ভোলায় অর্ধবেলা হরতাল পালিত হয়েছে। সারাদেশে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি চাপ বাড়াচ্ছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। নতুন করে ৬ দিনের সমাবেশসহ ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণাও করেছে দলটি। ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমের স্ত্রী সদর থানার ওসি (তদন্ত)সহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। আর পুলিশের গুলিতে আহত এবং পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের জানাজার নামাজে গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন এলাকায় জনতার ঢল নামে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ¯েøাগান দেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ¯েøাগানে ¯েøাগানের গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও জানাজায় শরিক হন। তারা সরকারের পুলিশের গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করে দুই নেতার রক্ত নিয়ে শপথ করে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি জানান। জানাজা নামাজের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নূরে আলম এবং আব্দুর রহিমের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন বিরোধী দল গণভবন ঘেরাও করতে গেলে বাধা দেয়া হবে না বরং তাদের চায়ের দাওয়াত দেয়া হবে। তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা রাজনীতির দুই মেরুতে থাকা সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপের একটি আভাস পেয়েছিলেন। কিন্তু গত ৩১ জুলাই দেশব্যাপী লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ মিছিলের অংশ হিসেবে ভোলা জেলা বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলিতে সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যায়। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম। একই সময় আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক। তারা বরিশাল ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নূরে আলম ৪ দিন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত বুধবার মৃত্যুবরণ করেন। দলের দুই সহকর্মীকে হারিয়ে সারাদেশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। হরতালসহ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দিতে শীর্ষ নেতাদের চাপও দিচ্ছেন তারা। যার ফলে গত বুধবার ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতির মৃত্যুর পর ভোলায় বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা হরতাল করেছে বিএনপি
এদিকে নূরে আলমের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজার ঘোষণা দেয়া হলে সেখানে বিকেল থেকেই কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। আইনি জটিলতার কারণে বুধবার লাশ পাওয়া না যাওয়ায় রাত সাড়ে ৮টায় বিএনপি মহাসচিব নয়াপল্টনে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় নূরে আলমের লাশ গ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জানাজার সময় ঘোষণা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব নেতাকর্মীদের বলেন, শুধু আব্দুর রহিম বা নূরে আলমই নয়, আমাদের যেসব নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে তার প্রতিটির হিসাব নেয়া হবে। তিনি এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহŸান জানান। এরপরই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন থেকে চলে যান।

এদিকে নিহত ছাত্রদল নেতার জানাজায় গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনতার ঢল নামে। বেলা ১১টায় জানাজার ঘোষণা দেয়া হলেও এদিন সকাল ৮টা থেকেই দলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের সামনে উপস্থিত হতে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীর উপস্থিতিও। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার পর জানাজায় উপস্থিতি পরিণত হয় বিক্ষোভ সমাবেশে। নিহত সহকর্মীর লাশের অপেক্ষায় থাকা বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে ¯েøাগান দিতে থাকে। ¯েøাগানে ¯েøাগানে তারা নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম ও ছাত্রদল নেতা মো. নূরে আলমের হত্যার বিচার দাবি করেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টায় জানাজা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও লাশ আনতে দেরি হওয়ায় বেলা সোয়া ১টায় শুরু হয় জানাজা। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খÐ খÐ মিছিল নিয়ে জানাজাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পলওয়েল মার্কেটের সামনের এলাকা পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নূরে আলমের লাশ নয়াপল্টনে পৌঁছলে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল কর্মীদের কান্নাকাটি ছেড়ে ‘জেগে ওঠা’র আহŸান জানান। তিনি বলেন, আজকে আর কোনো রোদন নয়, আর কোনো ক্রন্দন নয়; এখন আমাদের জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে এই জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে; ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে ৩৫ লাখ মামলার অবসান ঘটাতে হবে।

আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের ডাক দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রয়োজন সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আমাদের এই সন্তান, আমাদের ভাই নূরে আলমের হত্যার প্রতিশোধ নেব ইনশাআল্লাহ। আজকে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা সবাই শান্ত হয়ে থাকবেন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ইনশাআল্লাহ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব।

ভারাক্রান্ত কণ্ঠে মির্জা ফখরুল বলেন, পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। এর চেয়ে বড় বেদনার আর যন্ত্রণার কিছু নেই। আজকে আমাদের সামনে আমাদের ছেলে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম, তাকে গুলি করে হত্যা করেছে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী। গুলি করেছে হত্যা করেছে ভোলা জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে। আরো ১৯ জন ঢাকায় ও বরিশাল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আজকে নতুন নয়। এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা একদলীয় সরকার পাকাপোক্ত করতে ১৫ বছর ধরে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, ৩৫ লাখের বেশি আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

নূরে আলমের লাশ নয়াপল্টনে পৌঁছলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ নেতারা দলীয় পতাকায় কফিন ঢেকে দিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, আকরামুল হাসান, অঙ্গসংগঠনের ইশরাক হোসেন, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, সুলতান সাল্হাউদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনোয়ার হোসাইন জানাজায় অংশ নেন।

এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের নেতারা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ভোলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, রাত ৯টায় শহরের চরনেওয়াবাদ আলতাজের রহমান কলেজের মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।

৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা : আব্দুর রহিম ও নূরে আলমকে হত্যার প্রতিবাদে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ৭ আগস্ট সারাদেশে শোক হিসেবে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও দোয়া, ৬ আগস্ট ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় ছাত্র সমাবেশ, ৭ আগস্ট কৃষক দলের, ৮ আগস্ট যুবদলের, ১০ আগস্ট শ্রমিক দলের, ১১ আগস্ট মহিলা দলের এবং ১২ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা : ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার নিহতের ঘটনায় ভোলা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আরমান হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে হত্যার ঘটনা নিয়ে থানায় রক্ষিত মৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দার কামাল। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর অধিকতর শুনানি শেষে মামলার বাকি আদেশ দেবেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।

ভেলায় অর্ধদিবস হরতাল : নূরে আলম নিহতের প্রতিবাদে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দুপুরের দিকে প্রত্যাহার করে বিএনপি। বেলা ১২টায় ভোলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরসহ দলীয় নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর রায় বলেন, জনগণের দাবি নিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এই হত্যাকাÐে সরকার জড়িত না থাকলে দ্রæত দায়ী পুলিশদের আইনের আওতায় আনা হোক। ভোলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা তার নিজ থেকে প্রত্যেকে এই হরতাল পালন করার জন্য। তাই তাদের কথা চিন্তা করে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ছাত্রদল। গতকাল বিকেলে শহরের নবাববাড়ী রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহŸায়ক ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুর এ আলম সিদ্দিকী রিগানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল। সমাবেশে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, জেলায় গতকাল দুপুরে মাগুরায় ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল যুবদলের নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এ হত্যাকাÐের তীব্র নিন্দা করে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। ছাত্রদলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্প্দক আবু তাহের সবুজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাসানুর রহমান হাসু, জেলা যুবদলের সহ সভাপতি আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিলে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুর সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক পারবেজ আহমেদের নেতৃত্বে জেলা বিএপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হযরত আলীর বাসা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা যুব দলের আহŸায়ক পারভেজ আহমেদ, সদস্য সচিব আব্দুল আওয়াল সরকার, শহর যুবদলের যগ্ন আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব, আবু আছরা রনিসহ প্রমুখ। এর আগে শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদল বিক্ষোভ
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড় জেলা ছাত্রদল গতকাল বিকেলে জর্জ কোট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়৷ সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিকের নেতৃত্বে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশে অংশ নেয়।

বড়াইগ্রাম (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম ও ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম নিহতের প্রতিবাদে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম খান কানন, ছাত্রদল নেতা রাশেদুল ইসলাম, সুমন, মোহন, রোনাল ও ইউসুফ বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা অবিলম্বে দুই নেতাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : দুই নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ময়মনসিংহের ফুলপুরে সমাবেশ করেছে উপজেলা যুবদল। ময়মনসিংহ জেলা উত্তর যুবদলের সহ-সভাপতি ও ফুলপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেন খান ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বিপুল ফকিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বালিয়া মোড় থেকে শুরু হয়ে ব্রিজ মোড় পর্যন্ত এসে শেষ হয়।

পাথরঘাটা (বরগুনা) উপজেলা সংবাদাতা জানান, জেলার পাথরঘাটায় বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী যুবদলের শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয় পথসভা করার সময় অতর্কিত হামলা চালায় উপজেলা ছাত্রলীগ। গতকাল বেলা এগারোটার দিকে পাথরঘাটা থানা সংলগ্ন উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

সিংড়া (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন পৌর যুবদলের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট. নাজমুল হক, সদস্য সচিব আমিনুল হক, উপজেলা যুগ্ম আহŸায়ক আবু সাঈদ পলাশসহ প্রমুখ।

গাবতলী (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় ও পৌর যুবদলের উদ্যোগে নাড়–য়ামালা বন্দরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এ ঘটনায় গাবতলী উপজেলা ও পৌর যুবদলের নেতৃবৃন্দরা প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের অতিদ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানান। একই সঙ্গে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং শোক প্রকাশ করা হয়েছে। গাবতলী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আরিফুর রহমান মজনু’র সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রুহুল হাসান রুহিনের সঞ্চালনা’য় আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মহব্বত আলী, সম্রাট মাহারুফ, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল লতিফসহ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৩ এএম says : 0
আচ্ছা পুলিশ কি জানেনা পায়ের নিচে গুলি করতে হয়
Total Reply(0)
Morshed Alam ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
একটা স্বাধীন দেশে এভাবে সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করা কোনো ভালো লক্ষণ নয়! এই ঘটনার সাথে জড়িতদের যদি উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয়,নোট করে রাখুন এর ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি অপেক্ষা করছে!!!
Total Reply(0)
হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৩ এএম says : 0
আচ্ছা পুলিশ কি জানেনা পায়ের নিচে গুলি করতে হয়
Total Reply(0)
Rased Prodhan ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৩ এএম says : 0
মামলা গ্রহণ করার জন্য মাননীয় আদালত কে অসংখ্য ধন্যবাদ। গ্রেফতার করা হোক আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদের।
Total Reply(0)
K M Hossain ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
এভাবে বি এন পির প্রতিটা খুন ও গুমের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত,ফলাফল যাই হোক।পরবর্তীতে এ মামলার সূএ ধরে নেতা কর্মীদের খুনের বিচার একদিন অবশ্যই করা যাবে ।
Total Reply(0)
K M Hossain ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
এভাবে বি এন পির প্রতিটা খুন ও গুমের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত,ফলাফল যাই হোক।পরবর্তীতে এ মামলার সূএ ধরে নেতা কর্মীদের খুনের বিচার একদিন অবশ্যই করা যাবে ।
Total Reply(0)
Abdus Salam ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
অপরাধ যেই করুক শাস্তি তার হবেই। এটাই নিয়ম।
Total Reply(0)
Haque Mohiuddin ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
অতিউৎসাহী কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার জন্য আজকে বাংলাদেশের এই বেহাল অবস্থা।
Total Reply(0)
Shahajahan Ripon ৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
এটা একটা ঐতিহাসিক মামলা, এখন লাভ না হলেও ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন