প্রশ্ন : শুনেছি বৃহস্পতিবার মৃতব্যক্তি তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে আসে। এটি কতটুকু সত্যি আর যদি আসে, তা হলে একজন ভালো মুসলমান হিসেবে আমাদের কী করণীয়?
উত্তর : মৃতব্যক্তি কখনোই আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে আসে না। আসে কেবল শহীদরা। শহীদ মানে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী শরিয়তসম্মত শহীদ। শহীদের রুহ দুনিয়াতে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে আসতে পারে। তারা জীবিত মানুষের ন্যায় আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। সাধারণ মৃতরা রুহের জগতে থাকে। ঈমানদারদের রুহ থাকে ইল্লিয়্যিনে, আর কাফিরের রুহ থাকে সিজ্জিনে। এ দু’টো জগতের অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। তবে, যে কোনো সময় মৃতব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তা মৃতের রুহে পৌঁছে দেয়া হয়। নফল নেক কাজের সওয়াবও পৌঁছে দেয়া হয়। বিশেষত দান-সদকার।
দুনিয়ায় করে যাওয়া তার সদকায়ে জারিয়া. দ্বীনি ইলম প্রসারের ব্যবস্থা এবং সন্তানের নেক দোয়া মৃত্যুর পরও সবসময় তার রুহে পৌঁছতে থাকে। যে কোনো সময় মৃতের কবর জিয়ারত করলে, তাকে সালাম ও দোয়া জানালে তৎক্ষণাত আল্লাহ তায়ালা ওই মৃত ব্যক্তির রুহ কবরে ফিরিয়ে দেন। আর সে সালামের জবাব দেয়। পরিচিত হয়ে থাকলে জিয়ারতকারীকে চিনে। বৃহস্পতিবারের যে কথাটি প্রশ্নে এসেছে এর তাৎপর্য হলো, প্রতি বৃহস্পতিবার তথা জুমা পূর্ব রাতে কবরবাসীরা যে কোনো জিয়ারতকারীর অপেক্ষায় থাকে।
কেউ যদি জিয়ারতে যায় কিংবা ঘরে বসেই সওয়াব পাঠায় তাহলে পুরা কবরবাসী আনন্দিত হয়।
এমনও আছে কোনো মানুষ ঘনঘন যদি নিজ বাবা-মা বা আত্মীয়ের কবর জিয়ারতে যায়, তাহলে সঙ্গের কবরবাসীরা তার বাবা-মা বা আত্মীয়ের রুহকে জিজ্ঞেস করে আজ কি তোমার ছেলে, নাতি, ভাই, ভাতিজা বা আত্মীয়টি আসবে না, বা এখনো আসছে না কেন? কিংবা এ বৃহস্পতিবার এলো না কেন? তা হলে তো আমরাও তার দোয়ার বরকতে কবরে অনেক শান্তি পেতাম। এভাবে জুমার রাত দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিংবা সারা সপ্তাহ যখনই কেউ কবর জিয়ারত করে, দোয়া দরুদ পড়ে আর সব ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করে তখন সবার মধ্যেই আনন্দের সাড়া পরে যায়। এক হাদিসে আছে, মৃত ব্যক্তিরা সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া মানুষের মতো, যে একটা অবলম্বনের জন্য হা-হুতাশ করতে থাকে। যদি কোনো ডিঙ্গি বা কাঠের টুকরা পায় অথবা কোনো উদ্ধারকারী তাকে জাহাজে উঠায় তখন তার যেমন আনন্দ লাগে, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াকারী, জিয়ারতকারী, সওয়াব রেসানিকারী লোকটিকে মৃতের তেমনই প্রিয় ও কাক্সিক্ষত বলে মনে হয়। এসব বর্ণনার আয়াত ও হাদিস উত্তরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। বিশেষভাবে এসব জানতে চাইলে ৭ শতাব্দী আগের মনীষী, মুসলিম উম্মাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওজিয়্যা রচিত ‘কিতাবুর রুহ’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন