মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

স্ত্রীর কটু আচরণে স্বামীর করণীয়

মুফতি আবুল কাসেম | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৬ এএম

বিবাহ আল্লাহ প্রদত্ত বড় একটি নেয়ামত। এর মাধ্যমে মানুষ বহু পাপাচার থেকে বেঁচে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যত মধুর হয়, দাম্পত্য জীবন ততই সুখময় হয়। দু’জনের মনের মিলেই সুদৃঢ় হয় বৈবাহিক বন্ধন। অনাবিল শান্তি বয়ে আনে তাদের দাম্পত্যজীবনে। আর তাদের মনের অমিলে সৃষ্টি হয় পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষসহ নানারকম অশান্তি । পরিবার পরিনত হয় জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সব পরিবারেই কিছু না কিছু ঝামেলা হয়।
এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে টুকটাক ঝগড়া-বিবাদ হয় না। হয় না তাদের মাঝে মান-অভিমান।
দু’জন একসাথে থাকলে ঝামেলা হওটাই স্বাভাবিক ; কারণ তারা তো মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। তবে সাথে সাথে সে ঝামেলা সমাধান করে ফেলতে হবে। নতুবা সোনার সংসার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে অল্পদিনেই। দাম্পত্যজীবনে নানারকম সমস্যার একমাত্র সমাধান, একে অপরকে ছাড় দেয়া। স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ ও ছাড় দিতে ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো! অতঃপর যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন একটি জিনিসকে অপছন্দ করছো, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা নিসা: ১৯)। যে নিজের স্ত্রীর কাছে উত্তম প্রকৃতপক্ষে সে-ই উত্তম মানুষ। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন,’তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি,যে নিজ পরিবারের নিকট সর্বোত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি : ৩৮৯৫)।
ইসলাম স্বামীকে তার স্ত্রীর কটু আচরণে ধৈর্যধারণ করতে উৎসাহিত করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,’যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে , সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়!তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও;কারণ তাদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড় তো অধিক বক্র। যদি তোমরা নারীদের স্বভাব একেবারেই ঠিক করে ফেলতে চাও, তবে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দাও, তবে তা সর্বদা বাঁকাই থেকে যাবে। তাই তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।’ (সহিহ বুখারি : ৫১৮৫)।
স্ত্রীর প্রতি অযথা রাগ করা যাবে না। তার মাঝে কোনো অপছন্দনীয় আচরণ পরিলক্ষিত হলে, অন্য ভালো গুণের কারণে তা অপছন্দনীয় হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,’মুমিন স্বামী যেন তার স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত না হয়। যদি স্ত্রীর মাঝে কোনো অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তবে অন্য ভালো গুণের কারণে তার প্রতি আবার সন্তুষ্টি আসবে। (সহিহ মুসলিম : ১৪৬৭)। সর্বোপরি মুমিন নর-নারী উভয়ে একে অপরের পরিপূরক। দুজনের একজন না থাকলে জীবন অপূর্ণ থেকে যায়। তাদের উভয় মিলেমিশে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে চলতে পারলেই জীবন হবে সৌন্দর্যে ও সৌকর্যে পরিপূর্ণ।
পাবে তারা রবের ক্ষমা ও পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,’মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী,অনুগত পুরুষও অনুগত নারী,সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী,যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী নারী,আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও অধিক জিকিরকারী নারী।তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা আল আহজাব : ৩৫)। দাম্পত্যজীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদের ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন