আমরা আমাদের বন্ধুদের চমকে দেওয়ার জন্য আমরা মাঝেমধ্যে পেছন থেকে দু’হাতে চোখ চেপে ধরে বলি, বলোতো আমি কে?’তখন বন্ধু যদি চিনতে পারে তাহলে পরক্ষনেই বলে দেয়। নাহয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আপনজনের নাম একের পর এক বলতে থাকে। এক বেদুঈন বন্ধুর সাথে রাসুলুল্লাহর সা. এমনই মজার ঘটনা শোনা যাক তাহলে।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক বেদুঈনের সাথে সখ্য ছিলো। নাম তাঁর যাহের। তিনি তার এই বেদুঈন বন্ধুকে শহর সংক্রান্ত কাজে সাহায্য করতেন আর বেদুঈন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গ্রাম সংক্রান্ত কাজে সাহায্য করতেন। কখনো কখনো সে খুব আন্তরিকতার সাথে রাসুলের জন্য হাদিয়া আনতেন।রাসুল (সা.) তাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে উপহারের মূল্য দিয়ে দিতেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যাহের গ্রামে আমাদের প্রতিনিধি এবং আমরা তাঁর শহরের প্রতিনিধি। এই বেদুঈন একদিন বাজারে নিজের কিছু পণ্য বিক্রি করছিল। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছন থেকে চুপিসারে গিয়ে তাঁর চোখ চেপে ধরলেন এবং বললেন, বলোতো আমি কে? বেদুঈন তো ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে যান। পরক্ষনেই বুঝতে পেরে আনন্দের আতিশয্যে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বুকের মধ্যে মাথা ঘষতে থাকেন। অত :পর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে বললেন, এই দাসটা কে কিনবে? যাহের বললেন, আমার মতো অকর্মন্য দাসকে যে কিনবে, সে ঠকবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর চোখে অকর্মন্য নও।
আমরা আমাদের দাদু নানু সহ বয়স্ক স্বজনদের সাথে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রসিকতাপূর্ণ কথা বলে থাকি। এমনি একজন বৃদ্ধার সাথে রাসূলে করিম এর রসিকতার বর্ণনা দেখুন, একবার এক বৃদ্ধা মহিলা সাহাবী রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল আপনি আমার জন্য একটু দোয়া করবেন যেনো আমি জান্নাতবাসিনী হই। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে তাকে বললেন, কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যেতে পারবেনা” বৃদ্ধা মহিলাটি একথা শুনে কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছিলো। এমন সময় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অবস্থা দেখে বললেন, জান্নাতে কেউ বৃদ্ধা অবস্থায় প্রবেশ করবেনা।বরং আল্লাহ সবাইকে পূর্ণ যৌবন দান করে প্রবেশ করাবেন। একথা শুনে বৃদ্ধা মহিলা আশ্বস্ত হয়ে এক গাল হেঁসে চলে গেলেন।
একবার এক মহিলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাজির হলে তিনি তার স্বামীর নাম জানতে চাইলেন। মেয়ে লোকটি স্বামীর নাম বললো। হুজুর তখন লোকটিকে চিনতে পেরেছেন। এমন সময় ভাব দেখিয়ে বললেন, ও, ঐ যে সাদা চোখ ওয়ালা লোকটা তাই না? মহিলাটি বাড়িতে ফিরে তার স্বামীর চোখ দু ‘টু মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। স্বামী বললো, তোমার কি হয়েছে? এভাবে থাকিয়ে আছো কেনো? মেয়েটি বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি আপনার নাম বললাম। তিনি বললেন, ও, ঐ লোকটি! যার চোখে সাদা রং রয়েছে। স্বামী বললো, আমার চোখে কি সাদা রং নেই? কালোর চেয়ে সাদা অংশ কি বেশি নয়?’
ইসলামে কারো নাম বিকৃত করে ডাকা শরিয়া নিষিদ্ধ কাজ।কিন্তু কারো মন জয় করার জন্য, তাকে আদর করে কাছে টানার জন্য, আসল নামটি তারা আরো সুন্দর করে ডাকতে মানা নেই। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথীদের সাথে এমন সুন্দর সুন্দর নামে রসিকতা করে ডেকেছেন আবার সাহাবায়ে কেরাম এটাকে নিজের নাম করে নিয়েছেন। এবং এ নামেই প্রসিদ্ধ হয়ে গেছেন। যেমন- একবার হযরত আলী রা. মাটিতে শুয়ে ছিলেন। এতে তাঁর মুখ মন্ডলে মাটি লেগে গেলো রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে রসিকতা করে বললেন, আবু তুরাব। আসহাবে সুফফার সদস্য হযরত আব্দুর রহমান রাসুলের সাথে সাক্ষাৎ কালে দেখলেন তাঁর জামার হাতায় একটা বিড়াল ছানা। বিড়াল ছানার সঙ্গে তাঁর খুবই ভাব। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রসিকতা করে বললেন, আবু হুরায়রা। অর্থাৎ, বিড়ালের বাপ। প্রসিদ্ধ এ সাহাবীর নাম আবু হুরায়রা বলে খ্যাত হয়ে যায়। প্রিয়নবীর স্নেহমাখা নামটিকেই নিজের নাম পছন্দ করে নেন। ছোট্ট শিশু উমায়ের এর পালিত বুলবুলি টি মরে গেলে সে ভীষণ মর্মাহত হয়। মন খারাপ করে যখন উমায়ের বিষন্ন মনে বসে আছে তখন আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হাসানোর জন্য ছন্দ মিলিয়ে বললেন, ইয়া উমায়ের, মা ফাআলান নুগায়ের? (শামায়েলে তিরমিজি)
আমাদের প্রিয়নবী ফজরের নামাজের পর নিয়মিত বৈঠক করতেন। সেখানে জাহেলি যুগের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামগণের সাথে হাসতেন। শিশুদের সাথে এবং স্ত্রীদের সাথে হাস্যকৌতুক করতেন। আমাদের সকলের জানা আছে, একবার জনহীন একচত্বরে রাসুল পাক আর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) এর সাথে প্রতিযোগিতা দিলেন। কে আগে যেতে পারে। প্রতিযোগীতায় দৌড়ে মহানবী জিতলেন। তখন মুচকি হেসে আয়েশা (রা.) কে বললেন, আয়েশা এ হলো তোমার সেদিনের বদলা যেদিন তুমি আমাকে দৌড়ে পিছনে ফেলে গিয়েছিলে। এরকম অনেক হাস্য-রসিকতা করছেন।রাসূল (স) কখনো রুক্ষ,কঠোর বা কর্কশ মেজাজের ছিলেননা। তিনি সবসময় প্রফুল্ল মনে উত্তম ভাষায় মার্জিত ভঙ্গিতে কথা বলতেন। এটা উম্মতের জন্য একটা বড় নেয়ামত। তিনি বিদ্রুপ কিংবা অন্যকে আক্রমণাত্তক কথা বলতেন না। সীমার বাইরে গিয়ে কিংবা মিথ্যা বলে রসিকতা করতেন না। আমরা আমাদের জীবনে হাসি-কান্না, আনন্দ-দু:খ তথা সকল ক্ষেত্রেই রাসুলুল্লাহর রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরণ করবো, এমন প্রত্যয়ই আমাদের দেবে চিরকালীন প্রশান্তি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন