যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল দোয়া, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিশ্ব মুসলিমের শান্তি কামনাসহ মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয় করেছেন।
আশুরা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় আশুরার গুরুত্ব তাৎপর্য তুলে ধরে ইমাম ও খতিবরা মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এ মর্যাদপূর্ণ দিনটিতে ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ কার্যক্রম থেকে বিরত থেকে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে তাগিদ দিয়েছেন ইমামরা। দিনটির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে অনেকেই নফল রোজা ও ইবাদত বন্দেগি করেছেন।
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। হোসনি দালানের উত্তর গেট দিয়ে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে উড়ানো হয়েছে কালো-লাল-সবুজের নিশান। এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন হায় হোসেন’ ধ্বনি তোলেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগের পরনে ছিল কালো পোশাক। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। হোসনি দালানে। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের নজরদারি করতে দেখা গেছে।
সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ্র জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ দিন ১০ মহররম। দিনটি পবিত্র আশুরা নামেও পরিচিত। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে, তথা আশুরার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মাবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে। কারবালার শোকাবহ এ ঘটনা অর্থাৎ পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলো আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে যথাযোগ্য মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে নগরীর মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও শোহাদায়ে কারবালা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের উদ্যোগে আশুরা উপলক্ষে এবারও ১০ দিনব্যাপী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অবাঙালিদের উদ্যোগে নগরীর ঝাউতলা থেকে এ উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর লালদীঘি মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, নগরীর আলতাপোল লেনস্থ আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতানী ইমাম বাড়িতে শোক কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা এবং শোক ও মাতম মিছিল।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, এই উপলক্ষে বরিশালের জামে এবাদুল্লাহ মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে কারবালার শহিদদের স্মরনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গত মঙ্গলবার সকালে মিলাদ ও ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে বিশ^ জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেবের আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে কার্যক্রম শেষ হয়।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলায় আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হয়।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দৌলতদিয়ায় ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আঞ্জুমান ই কাদেরীয়া তরিকার মুরিদান ও দৌলতদিয়া খানকাহ শরীফের উদ্দ্যোগে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাউজান (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রাউজান আমিরহাটে গত সোমবার এই উপলক্ষে হযরত এয়াছিনশাহ পাবলিক কলেজের মরহুম একে এম ফজলুল কবির চৌধুরী হল রুমে আহলে বায়তে রাসুল (দঃ) স্মরণে গরিব অসহায়দের মাঝে দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
হিলি সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে এই উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন