ভারতের কোলকাতায় বাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে গত ৫ বছর ধরে বসবাস করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে. জে. বি. ডিগ্রি কলেজের জুনিয়র প্রফেসর বিশ্বনাথ দত্ত। গত এক বছরের মধ্যে এক দিনের জন্যও কলেজে নেই তার হাজিরা। অথচ বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সকল সুবিধাই ভোগ করছেন বিশ্বনাথ দত্ত।
জানা যায়, ওই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের জুনিয়র প্রফেসর মন্নাফ সরকার ঘটনার ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, প্রফেসর বিশ্বনাথ দত্ত প্রায় ৫ বছর আগে সপরিবারে ভারতে চলে যান। মাঝেমধ্যে তিনি ভারত থেকে দেশে এসে কলেজে হাজিরা দিয়ে আবার ফিরে যান। তবে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ছুটি ছাড়াই ভারতে অবস্থান করছেন।
প্রফেসর বিশ্বনাথ দত্ত কোলকাতায় বসবাস করলেও তাকে কাগজপত্রে কলেজে দেখাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আব্দুস ছালাম বিশ্বাস। তিনি বিশ্বনাথের ভাই সুনিল দত্তের সাথে যোগসাজসে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। বিশ্বনাথ দত্তের চাকরির ইনডেক্স নম্বর-৪০৩৩৮৪, পাবনা বেড়া শাখা সোনালী ব্যাংক, হিসাব নম্বর-০০২০৬৩২৫১।
লিখিত অভিযোগের অনুলিপি থেকে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্ত তার বড় ভাই সুনিল দত্তের কাছে ব্যাংকের চেকবই স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন। প্রতি মাসে বেতন বইতে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিজেই বিশ্বনাথ দত্তের নামের ঘরে স্বাক্ষর করে বেতন ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এরপর বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনিল দত্তকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ব্যাংক জমা হওয়া বেতনের পুরো টাকা উত্তোলন করিয়ে নিজেদেরে মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এছাড়া কলেজ অংশের মাসিক বেতনের পুরোটাই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জাল স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেন।
বিশ্বনাথ দত্ত পরিবার নিয়ে ভারতে বসবাস করলেও নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন। গত ৫ বছর ধরে তার বেতন ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে। ভোগ করছেন সরকারের উৎসবভাতা ও বোনাসসহ সুবিধাদি। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক মন্নাফ সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুরো ঘটনাই সত্য। বিশ্বনাথ দত্ত বহুদিন ধরে সপরিবারে ভারতে বসবাস করছেন। এক বছর হলো তিনি কলেজে আসেন না। অথচ কলেজ থেকে বেতনভাতা পাচ্ছেন ঠিকই। হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত লেখা আছে। বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত দেখানো হয় প্রায় এক বছর ধরে।
বিশ্বনাথ দত্তের বেতনের বিষয়ে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আব্দুস ছালাম বিশ্বাস নিজেই বিশ্বনাথের স্বাক্ষর দেন। শুনেছি বিশ্বনাথ তার ভাইয়ের কাছে সোনালী ব্যাংকের চেক বইয়ে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন এবং তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আব্দুস ছালাম বিশ্বাসের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি পরে কথা হবে। সোনালী ব্যাংক পাবনার বেড়া শাখায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্তের বেতন নিয়মিত একাউন্টে জমা হচ্ছে এবং সেই টাকা উত্তোলনও হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল আজিজ খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কলেজের নতুন সভাপতি হয়েছি। তবে বিশ্বনাথের বিষয়ে শুনেছি তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ভারতে থাকেন। আমি সভাপতি হবার পর কলেজে তিন চারটি মিটিং করেছি। তার সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, এবার আমি কলেজে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে ১৫ আগস্ট তাকে উপস্থিত থাকার কথা বলেছি। এর আগেই মিটিং ডাকবো। এরপরেও ১৫ আগস্টে যদি উপস্থিত না হন তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং যারা তাকে এই অবৈধকাজে সহায়তা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি বিশ্বনাথ দত্তের ভাইকে দিয়ে তার বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে।
বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খবির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে কলেজে ছুটি ছাড়া বহুদিন অনুপস্থিত থেকে তিনি বেতন তুলতে পারেন না। এক বছর তো ছুটিতে থাকতেই পারেন না। আর মেডিকেল ছুটি নিলেও তো বেতন নিতে পারবেন না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সবুর আলী বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এটা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন