শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেপালের ট্রানজিটে প্রস্তুত বন্দর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারে ব্যবহার হবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের বাড়তি সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নেপালকে ট্রানজিট সুবি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কাছের প্রতিবেশী দেশ নেপালের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ, পারস্পরিক সহযোগিতা ও দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু সম্ভাবনার বিপরীতে বর্তমানে বাণিজ্যের আকার যৎসামান্য। ভূ-প্রাকৃতিকভাবে বন্দর সুবিধা বঞ্চিত স্থলভূমি, পাহাড়-পর্বত পরিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) দেশ নেপাল ও ভুটান। উভয় দেশ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারে আগ্রহী। বন্দর-সুবিধা প্রদানে প্রস্তুত বাংলাদেশও। নেপাল, ভুটানের জন্য ট্রানজিটের পণ্যসামগ্রী সামাল দেয়ার উপযোগী পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে চট্টগ্রাম ও মোংলা উভয় সমুদ্র বন্দরে।
নেপাল ও ভুটানের সাথে দূরত্ব ও যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনায় নিকটতম সমুদ্রবন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম ও মোংলা। বিশেষ করে নেপালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিয়ে অনায়াসেই পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়া সম্ভব। অথচ বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ঘুরপথে নেপালে আমদানি পণ্য পৌঁছানো হয়। এ কারণে ব্যয় ও সময় অপচয় হয় কয়েকগুণ। আটকে আছে নেপালের রফতানি সম্ভাবনা। তাছাড়া বাংলাদেশ নিজের দু’টি বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্যসামগ্রী পুনঃরফতানির সুযোগও কাজে লাগাতে পারছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য নেপালকে প্রস্তাব দিয়েছেন। সফরকারী নেপালের সংসদীয় প্রতিনিধিদল গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এই প্রস্তাব দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল আমাদের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারে। নেপালের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন নেপাল ফেডারেল পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারপারসন পবিত্র নিরুওলা খারেল।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীমহল আশাবাদী, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের সুবিধা নেপালকে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। এর বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর ফলে সম্ভাবনাময় বাণিজ্যে লাভবান হবে উভয় প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ-নেপাল দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য প্রসার এবং ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। নেপাল, ভুটানসহ সার্ক অঞ্চলে বাংলাদেশের বিরাট বাজার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। বাড়বে রফতানি ও পুনঃরফতানি আয়। কম খরচে ও সহজে পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নেপালকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রবীণ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান গতকাল বুধবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমাদের বন্দরের বাড়তি সক্ষমতা আছে। একে কাজে লাগিয়ে নেপালের ট্রানজিট মালামাল পরিবহন সুবিধাজনক হবে। এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। এটি প্রত্যাশিত। কেননা নেপাল আমাদের পক্ষের, আস্থাশীল, পুরনো ও বিশ্বস্ত বন্ধু। স্থলভূমি বেষ্টিত দেশ হওয়ার কারণে বন্দর ব্যবহারের চাহিদা তাদের রয়েছে। আমরা নেপালকে খুশি করতে পারবো। তিনি বলেন, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আমরা খুশি নই। তারা পণ্যসামগ্রী পরিবহন করতে গিয়ে রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে দিচ্ছে। নেপালকে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শর্ত দেয়া হবে যাতে সড়কের কোন ক্ষতি না করেই মালামাল পরিবহন করা হয়। রাস্তাঘাট, সড়কের ক্যাপাসিটি নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে জানান, সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সবসময়ই প্রস্তুত রয়েছে। বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) খুব শিগগিরই পুরোদমে চালু হবে। সেখানে অতিরিক্ত ৪টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বার্ষিক ৫ লাখ টিইইউএস। বন্দরে বর্তমানে ৫৪ হাজার টিইইউএস কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা রয়েছে। সব মিলিয়ে বন্দরের পর্যাপ্ত সক্ষমতা, অবকাঠামো সুবিধা আছে। নেপাল যদি চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করতে চায় এরজন্য বন্দরের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে।
ট্রানজিট সুবিধার পাশাপাশি নেপালের সাথে বাণিজ্য প্রসারের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। পর্যটন খাতের বিকাশ, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, কৃষি-খামারের আধুনিকায়ন ও বৈচিত্র্যকরণের ফলে নেপালিদের ক্রয়ক্ষমতা উত্তরোত্তর বেড়ে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের পণ্যের ব্যাপক বাজার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানিকৃত হরেক ধরনের পণ্যসামগ্রী নেপালে পুনঃরফতানি ও বাজারজাতের সুযোগ রয়েছে। নেপালের ব্যবসায়ীমহল বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানির ক্ষেত্রে নেপাল প্রায় ৬০ শতাংশ ভারত নির্ভর। ২০ ভাগ পণ্য আসে চীন থেকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সৃষ্টির সুযোগ ব্যাপক। কেননা নেপাল ভারত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে। বিশ্বায়নের দিকে ঝুঁকেছে।
নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগ, সহযোগিতামূলক আদান-প্রদান বৃদ্ধি করতে হলে অন্যতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলেই চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার সড়কপথে সহজ যোগাযোগ সম্ভব হবে। এর জন্য বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানের মাঝামাঝি ভারতের শিলিগুড়ির (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত) কাছে মাত্র ২২ কিলোমিটার সড়কপথ করিডোর পাড়ি দিতে হয়। যা ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত। সেই ২২ কি.মি. দূরত্বের ফুলবাড়ী-শিলিগুড়ি করিডোরের প্রস্থ ২১ থেকে স্থানভেদে ৪০ কি.মি.। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা দুই ভাগ হলে শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডোর সৃষ্টি হয়। এটি সহজে ব্যবহারের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত ফুলবাড়ী চুক্তি সম্পাদিত হয়।
কিন্তু ভারতের অসহযোগিতা ও হরেক বাধা-বিপত্তি, হয়রানি, জটিলতার মারপ্যাঁচে এই করিডোর দিয়ে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। অথচ গ্যাট, ১৯৯৪ (ধারা ৫, অনুচ্ছেদ ১) অনুযায়ী : ‘কোন ফ্রেইট ট্রাফিক পণ্যসামগ্রী যদি কোন দেশে প্রবেশের পূর্বে যাত্রা শুরু করে এবং উক্ত পণ্য দেশের বাইরে যাত্রা শেষ করে তবে তাকে ট্রানজিট, করিডোর কিংবা ট্রান্সশিপমেন্ট ট্রাফিক (পণ্যসামগ্রী) হিসেবে গণ্য করা হবে। যেগুলো বাধাহীনভাবে আসা-যাওয়া বা পরিবাহিত করা যাবে’।
বাংলাদেশের মানসম্মত খাদ্যপণ্য, সিরামিকস পণ্য, ওষুধ, আসবাবপত্র, সাবান, মেলামাইন, হোম টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালী পণ্য, আইটি পণ্য, নির্মাণসামগ্রী, সেবাখাতের পণ্যের চাহিদা রয়েছে নেপাল ও ভুটানে। নেপাল থেকে সুলভে আমদানির সুযোগ রয়েছে ডাল, মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য। তাছাড়া নেপাল, ভুটানের অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা লাভ করছেন। তাদের কেউ কেউ নেপাল, ভুটানে রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও আসীন হয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Nk Biswas ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২০ এএম says : 0
বাংলাদেশ এমন হবে কেন প্রবাসী ভাইয়েরা কত কষ্ট করো পরিবার জন্য নিয়ে আসে আর এই কেমন আইন কিছু করতে পারেনা কেমন সরকার এটা
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২২ এএম says : 0
এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে।
Total Reply(0)
Sohag Sikdar ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২০ এএম says : 0
বিশ্ববাজারে পন্যের দাম কমলেও বাংলাদেশ কমায় না, কারন রাশিয়া -ইউক্রেনের যুদ্ধের সম্পূর্ণ খরচ বাংলাদেশ যে বহন করতেছে
Total Reply(0)
Antara Afrin ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২২ এএম says : 0
তবে আমাদের ন্যায্য পাওয়া যেন ঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৩ এএম says : 0
আমাদের বন্দরগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১১ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৩ এএম says : 0
আমাদের বন্দরগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন