গণপরিবহনে এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি ওয়েবিল। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণার পরও ওয়েবিল বন্ধ না হওয়া সাধারণ যাত্রীদের সাথে হঠকারিতা বলে জানিয়েছেন বাস যাত্রীরা। রাজধানীতে চলাচল করা বিভিন্ন পরিবহন এখনো ওয়েবিল ও চেকিং চালু রেখেছে। আর পরিবহেন বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, ওয়েবিল নামক পদ্ধতির মাধ্যমে যাত্রীদের উপর চাপানো হয় বাড়তি ভাড়া। মালিক পক্ষ এতোদিন বাসের যাত্রী গণনা করার বা ভাড়ার হিসেব রাখার কথা বলে চালিয়েছেন। কিন্তু নানা সমালোচনার মুখে ওয়েবিল প্রথা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সরকারের পুনর্নির্ধারিত বাসভাড়া কার্যকর করাসহ গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। গত ১০ আগস্ট থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। গত বুধবার সংগঠনের দফতর সম্পাদক সামদানী খন্দকার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সিদ্ধান্তগুলো হলো- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায় করতে হবে। চার্টের বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রতিটি গাড়িতে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট অবশ্যই টানিয়ে রাখতে হবে। কোনো পরিবহনের গাড়িতে বিআরটিএ’র পুনঃনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে সভায় মালিকদের সমন্বয়ে ৯টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়। এসব টিম বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে থেকে সব অনিয়ম তদারকিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা শহর ও শহরতলী রুটে চলাচলকারী গাড়ির ওয়েবিলে কোনো সø্যাব থাকবে না। রাস্তায় কোনো চেকার থাকবে না। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে, খোলা রাখা যাবে না। রুট পারমিটের স্টপেজ অনুযায়ী গাড়ি থামাতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভিজিল্যান্স টিমের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সমিতি। গত বুধবার থেকেই তা কার্যকর করার কথা থাকলেও কেউ কেউ এখনো বহাল রয়েছে অনেক রুটে। আগের মতো এখনো চেকাররা বাস থামিয়ে যাত্রী গুনছেন। এজন্য তাদের বাসপ্রতি ১০ টাকা করে আদায় করতেও দেখা গেছে।
তবে বাসের চেকাররা জানান, বলেন, নির্ধারিত কোম্পানির বাস দেখাশোনার জন্য আমরা রাস্তায় কাজ করছি। বাসে কতজন যাত্রী আছে কতক্ষণ পর আসছে এসব দেখাশোনা করতে হয়। এজন্য গাড়ি থেকে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা করে দেয়া হয়। বাড়তি কোন বেতন নেই। আবার কিছু পরিবহন আছে যাদের মাসিক বেতন দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি পরিবহন ওয়েবিল অনুসারে যাত্রীদের কাছে ভাড়া আদায় করছে। চেকার উঠে যাত্রীর সংখ্যা দেখে নির্ধারিত খাতায় লিখছেন। ওয়েবিলে চেক করা ও বাড়তি ভাড়া আদায় করা কয়েকজন চেকার জানিয়েছেন তাদের কাছে ওয়েবিল বন্ধের কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই তারা আগের মতোই কাজ করছেন।
এদিকে, রাজধানীর সড়কে চলাচলকারী বাসে যদি বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট না থাকে তবে সেই বাসকে জরিমানা করা হচ্ছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এর সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বাস-মিনিবাসসহ পরিবহন ভাড়াও। সরকার নির্ধারিত এ ভাড়া যেন মেনে চলা হয় সেজন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দূরত্ব অনুসারে পরিবহন মালিপক্ষকে ভাড়ার চার্ট তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু ঢাকার সব পরিবহনে এই চার্ট দেখা যাচ্ছে না এবং অনেক পরিবহন এই চার্টের অতিরিক্ত ভাড়াও নিচ্ছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। নুর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদি কোনো গাড়িতে ভাড়ার চার্ট না থাকে, তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়তে পারে, কিন্তু অনেক সিএনজিচালিত বাসেও ভাড়া বেড়েছে দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, গত নভেম্বরে সিএনজির দাম বাড়ানোর পর যখন ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয় তখন গাড়িগুলোর সামনে স্টিকার ছিল, কোনটি সিএনজিচালিত, কোনটি ডিজেলচালিত। আমি মালিকপক্ষকে আহ্বান জানাবো, অবিলম্বে যেন এই স্টিকার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে।
যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার পর পরই ভাড়া বেড়েছে গণপরিবহনে। কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ছড়াই যে যা পাছে ভাড়া আদায় করছে। এখন ওয়েবিল প্রতি বাড়িয়েছে আরও পাঁচ টাকা। ভাড়ার তালিকা বাসের একাধিক জায়গায় থাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও দেখা যায়নি কোথায়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, গেটলক, সিটিং সার্ভিস, ওয়েবিল, চেকার এসব থাকবে না। প্রত্যেক বাসে ভাড়ার তালিকা নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নেমেছেন তারা। বাড়তি ভাড়া আদায় করলে কেউ ছাড় পাবেন না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণেও ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু বিআরটিএ নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে। যাতে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও হচ্ছে না, যাত্রীদের স্বার্থও সংরক্ষিত হচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন