শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অরক্ষিত প্রকল্প মৃত্যুফাঁদ

উত্তরার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের ভীতি-আতঙ্ক নিরাপত্তা বলয় না গড়ায় রাজধানীর নাগরিকদের উন্নয়ন যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে : প্রফেসর ড. শামসুল হক ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনায় সড়ক নিরাপত্তায় ঘা

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকায় অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ হচ্ছে অরক্ষিত অবস্থায়। প্রায় দুই কোটি লোকের ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ চলাফেরা করেন। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পের বেশির ভাগেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। উত্তরা এলাকার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে একেবারেই হেলাফেলাভাবে। প্রতিদিন এই সড়কে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে, অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় যাতায়াত করে লাখো শিক্ষার্থী। অথচ অরক্ষিতভাবে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। অরক্ষিত এই প্রকল্পে গার্ডার পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় উত্তরা এলাকার বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বসবাসকারী কয়েকজন জানান, খরচ বাঁচাতেই মূলত অরক্ষিত অবস্থায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে। বহুবার এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও বিআরটি’র দায়িত্বশীলরা কর্ণপাত করেননি। যার পরিণতি ১৫ আগস্টের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা।

জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর একটি চলাচলরত রাস্তায় এভাবে এতো বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া। কন্ট্রাকশন এমন একটি শিল্প যেখানে টাকা দেয়া হয় তবুও এমন একটি জনবহুল জায়গায় এভাবে কাজ হচ্ছে এটা কাম্য নয়। এতে নিরিহ মানুষ শিকার হচ্ছে। এই প্রকল্প করার আগে বিআরটির দর্শন অনুসরণ করা হয়নি। এসব কারণেই এখন আমাদের উন্নয়ন যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল বলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসব অব্যবস্থাপনায় কেউ সাহস নিয়ে কথা বলছেনা। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দায়িত্বশীলদের গাফিলতিতে উত্তরার বিআরটি প্রকল্প এখন মৃত্যুফাঁদ। যানবাহন ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের চলাফেরা করা কঠিন হয়ে গেছে। যানবাহন, রাস্তায় চলাচলকরা মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। সহজ যোগাযোগের জন্য উন্নয়ন করা হলেও চলমান প্রকল্পের অব্যবস্থাপনায় প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত সোমবার উত্তরা এলাকায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন পাঁচজন। এ ঘটনাটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতাই মূলকারণ হিসেবে দেখছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

ইতোমধ্যে রাজধানী উত্তরায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেটকারে পাঁচ জন নিহত ঘটনায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সড়কে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ নেমে আসে। প্রকল্পের কাজে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে দুর্ভোগের মাত্রাও বাড়তে থাকে। সঠিক সময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বার বার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে এই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন চলার কারণে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে যাতায়াতকারী সকল পরিবহনের সমস্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই মহাসড়কে জায়গাটুকু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে যোগাযোগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনৈতিক, মন্ত্রী ও বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা আসেন। আবার তাদের সফর শেষে নিজ দেশে ফিরে যান। আমাদের দেশের প্রবাসীরাও নিয়মিত দেশে ফিরেন এবং বিদেশে যান। এই বিমানবন্দরকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। যারা এই মহাসড়কটি ব্যবহার করেন।

রাজধানীর উত্তরা এখন গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এখানে দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক, আমলা, সাবেক আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দেশের নামিদামি সাংবাদিক, উদ্যোগতাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বসবাস। এই এলাকাতেই রয়েছে দেশের নামিদামি বেশকয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি আবাসন এলাকা। সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ নানা স্থাপনা। রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ। গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প এলাকা হওয়ার কারণে ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক পথ এটি। আর এই সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ হওয়ার কারণে এই এলাকাসহ এই সড়ক ব্যবহারের নির্ভরশীল লোকজনকে প্রতিনিয়তই পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে।

দীর্ঘদিন বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করার সময় সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি যেন বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্যও বের হলে সঠিক সময়ে যাওয়া যায় না। বেশিরভাগ অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস এই সড়ক ব্যবহার করতে চান না বলেও জানিয়েছেন চালকরা। তারা আরও বলেছেন, মাইক্রোবাসের যাত্রীরা গাড়িতে বসে থাকতে চান না।

জানা যায়, যানজট নিরসন ও সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সড়কে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফেরাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেই আশায় এখন গুড়ে বালি বলছেন তারা। অসাবধানতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। নিরিহ মানুষ মারা যাচ্ছে। গত সোমবারের দুর্ঘটনার পরও রাস্তায় আগের মতোই রাখা থাকছে গার্ডারের সারি। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার মাঝে প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে সব সময়ই ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় গণপরিবহন ও পথচারীদের।

গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই মধ্যে একটি সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে আরো দেড় বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প। বিআরটি প্রকল্প এখন সাধারণ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

গত ১৫ জুলাই গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার চৌধুরী এন্ড কোম্পানি ফিলিং স্টেশনের সামনে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে জিয়াউর রহমান নামের এক শ্রমিক নিহত ও অন্য দুজন আহত হন। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারের সামনে একটি গার্ডারের ঢালাই ধসে পড়ে। পরের দিন বিমানবন্দর এলাকায় প্রকল্পের ফ্লাইওভারে একটি গার্ডার তোলার সময় ভেঙে পড়ে। এ সময় দুই চীনা নাগরিকসহ চারজন আহত হন।

রাজধানী উত্তরায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেটকারে পাঁচ জন নিহত ঘটনায় প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই হয়েছে বলে বলছেন যোগাযোগ সংশ্লিটরা। দুর্ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ কাজ বন্ধ থাকার কথা। তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, ঠিকাদারদের কাছ থেকে আমরা খামখেয়ালিপনা পাচ্ছি। কোনোভাবেই আমরা তাদের কমপ্লায়েন্সে আনতে পারছি না। সড়ক নিরাপত্তা যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে ঘাটতি রয়েছে, আমরা দুঃখিত। তিনি আরও বলেন, দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই চীনা। এদের সঙ্গে শুরু থেকেই আলোচনা চলছে। এরা লোকবল কম ব্যবহার করে। যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করে। কাজটা শুধু চলমান রাখে, কিন্তু কাজের তেমন গতিও থাকে না। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি যাতে ফান্ড বাড়ানো যায়।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার জানিয়েছেন, রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) দায় রয়েছে। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার লঙ্গন করেছে। এ বিষয়ে ঢাকার চীনা দূতাবাসকে জানানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের এই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) সেফটির বিষয়টি অনেকবার লঙ্ঘন করেছে। এক কথায় বলতে চাই, দায় এড়ানোর প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের মূল্যবান জীবন চলে গেছে, এক্ষেত্রে আমরা কোনোরকম কম্প্রোমাইজ করতে চাই না। এ ঘটনার জন্য কে দায়ী সেটা কিন্তু স্টেপ বাই স্টেপ আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সবগুলোর সঙ্গে একটা লিগ্যাল কানেকশন আছে। সে জিনিসগুলো আমাদের ফলো করতে হবে। এটা আপনারা এভাবে ভাবার কারণ নেই যে আমরা একটা চাইনিজ কোম্পানিকে দায়ী করে আমাদের দায় ছেড়ে দিচ্ছি। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা এভাবে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এ প্রকল্প কাজ পরিচালনায় ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে উন্নয়ন কাজ চলতে দেয়া যাবে না। আগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কাজ শুরু করতে পারবে। এ দুর্ঘটনা আমাদের মনে নাড়া দিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কিন্তু খুব সহজেই এড়ানো যেত। যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থ করা হতো। এই ধরনের দুর্ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকার এসবের পেছনে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে খামখেয়ালি। তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো সাইনবোর্ড পর্যন্ত লেখা নেই যে, এখানে বা এদিকে কাজ চলছে। রাস্তা কোথায় বেরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া, কিছুই নেই। উপরে ওয়েলডিংয়ের কাজ করছেন। আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিচে ছিটকে পড়ছে। কোনো নিরাপত্তা নেই।
উত্তরা এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এই প্রকল্পটি আমাদের এলাকার জন্য এখন আর আশির্বাদ নয়। এখন এটি যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন আবার প্রকল্পের লোকজনের অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষকে মরতে হয়। এমনভাবে প্রকল্পের কাজ চলতে পারে না। আমরা এখন মনে হয় নিরাপত্তাহীনতায় আছি। পাঁচজনের নিহতের ঘটনায় কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার।

মাইক্রোবাসের চালক স্বপন মিয়া বলেন, এমনিতেই এই সড়ক দিয়ে যাত্রীরা আসতে চান না। এখন দুর্ঘটনার পর আরও বেশি আতঙ্ক কাজ করছে। এমনভাবে কোন ব্যবস্থা ছাড়া কাজ করলে দুর্ঘটনা আরো বাড়বে। এটা আসলে কোন দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যা।

সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা ইনকিলাবকে বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারিত সময়েও বিআরটির কাজ শেষ করা যায়নি। কারণ ঠিকাদারদের গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরির মতো দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম, অর্থ, প্রয়োজনীয় উপকরণ কিছুই নেই। এ কারণে মিল ছিলো না তাদের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবেরও। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় জমেছে ইকুইপমেন্ট জঞ্জাল। এই জঞ্জাল অপরিকল্পিত-অব্যবস্থাপনার মধ্যে ১০ বছর সাধারণ মানুষকে যেমন কষ্ট দিয়েছে, তেমন কেড়ে নিয়েছে সময় এবং অর্থ। আত্মঘাতি বিআরটি প্রকল্প বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে রিট : ঢাকার উত্তরায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় ৫ জনের নিহত হওয়ার ঘটনায় রিট করা হয়েছে। রিটে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্প এলাকার পথচারির চলাফেরায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সাগুফতা আহমেদ রিট করেন।বিচারপতি মো:মজিবুর রহমান এবং বিচারপতি কাজী মো:ইজারুল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চে আজ (বুধবার) রিটের শুনানি হওয়ার কথা রযেছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব,সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত:গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেটকার আরোহী শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।আহত হয়েছেন ২ জন।নিহতরা হলেন,আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫) ফাহিমা আক্তার(৩৮),ঝর্না আক্তার (২৭),ঝর্না আক্তারের দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা প্রকল্প এলাকায় জননিরাপত্তা প্রশ্নে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে আবেদন দিতে বলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন