ইসলাম একটি ভারসম্যপূর্ণ সার্বজনীন জীবন বিধানের নাম। মধ্যাপন্থায় অবস্থিত একটি আদর্শ কৃষ্টি কালচারের নাম। ইসলাম একদিকে যেমন কৃপণতাকে ঘৃণা করে তেমনিভাবে অপচয় ও অপব্যয়েরও নিন্দা করে। ইসলাম তার অনুসারীকে সকল ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী ও মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্র সবখানে মিতব্যয়ী হবার প্রতি জোরালো ভাবে উৎসাহিত করেছে। খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ, বিয়ে শাদীসহ জীবনের প্রতিটি সেক্টরে অপব্যয়ী থেকে বিরত থেকে মধ্যপন্থি হওয়ার প্রতি আদেশ করেছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘ইবাদুর রহমান’ তথা রহমানের প্রিয় বান্দাগণের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয়ও করে না আবার কার্পণ্যতাও করে না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি অবস্থান করে। (সূরা ফুরকান : ৬৭)।
অপর এক আয়াতে তিনি অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, তোমরা অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। (বনী ইসরাইল :২৬)। অপচয়কারীকে দুনিয়াতে আফসোস ও লজ্জিত হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, আর তুমি তোমার হাত গলায় বেড়ী করে রেখ না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে। (বনী ইসরাঈল : ২৯)।
এ প্রসঙ্গে আমীরুল মোমিনীন হযরত উমর রাজি. চমৎকার ভাষায় বলেন, তোমরা অধিক পানাহার থেকে বিরত থাক। কেননা তা শরীরে রোগ ব্যাধি ডেকে আনে। নামজের প্রতি অলসতা ও অবহেলা সৃষ্টি করে। তোমরা খাবারে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। কেননা তা শরীরের জন্য অধিক উপকারী এবং অপচয় থেকে বাধা সৃষ্টিকারী। বর্তমান যুগে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিমুহূর্তে মানুষের জীবনধারণের জন্য যে সব বস্তুর অতি প্রয়োজন সে সবের অন্যতম হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনের ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দও উপভোগ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিদ্যুৎকে ব্যবহার করে তৈরি হওয়া নানা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে মানুষ বর্তমান যুগে জীবন ধারণ করে থাকে।
রাতের অন্ধকারে কাজ করার জন্য বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহার থেকে শুরু করে, গরমকালে বৈদ্যুতিক পাখা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি সকল জীবনধারণমূলক উপাদানগুলিকে সচল রাখার জন্য প্রয়োজন বিদ্যুতের। তাছাড়া বর্তমানে মানুষ যোগাযোগ রক্ষার জন্য মূলত যে সকল উপাদান ও ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে, সেগুলিও চলে বৈদ্যুতিক শক্তির দ্বারা। এইভাবে প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে অনন্ত নিরবিচ্ছিন্ন পরিসেবা দিয়ে বিদ্যুৎ আমাদের জাতীয় জীবনে বিরাট অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।
সরকারি বেসরকারি অফিসগুলোতে আজ সীমাহীন বিদ্যুৎএর অপচয় ঘটছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলোর ভিটামিন ডি থেকে উপকৃত না হয়ে মোটা মোটা পর্দা ঝুলিয়ে অফিসগুলোকে করা হচ্ছে বিদ্যুৎ এর বাতি দিয়ে আলোকসজ্জা। বিয়ে শাদী ও কনসার্টের মতো অনুষ্ঠানগুলোতেও চলছে বিদ্যুৎ এর জঘন্যতম অপব্যবহার। চলছে অপ্রয়োজনীয় এসি বিলাস। বাসা বাড়িতেও মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট এর অপব্যয়। কিন্তু আমাদেরকে একটি বিষয় খুব ভালো ভাবে বুঝতে হবে যে কোন জাতি যখন আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের না-শোকরী করে, সীমাহীন এর অপব্যয় করে আল্লাহ তখন রাগান্বিত হয়ে সে সব নেয়ামত উঠিয়ে নেন। পূর্ববর্তী জাতির আচার আচার-আচরণে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।
আজকের অভিশপ্ত লোডশেডিং এর জন্য বিদ্যুৎ এর লাগামহীন অপচয়কেই দায়ী করা যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে গোটা দেশ ও জাতি আজ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান। কলখারকানা ও হাসপাতালে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। অর্থনীতির চাকা পঙ্গু হওয়ার পথে। জাতীয় এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদেরকে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপরোক্ত বাণীসমূহের বেশি বেশি চর্চা করতে হবে। একটি উন্নয়নশীল ও গতিশীল দেশ গঠনে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে মিতব্যয়ী হতে হবে। অপচয় ও অপব্যয়ের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন