উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের তিন দিনের মাথায় চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কম্পাউন্ডার পদে নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে কয়েকজন পরীক্ষার্থীর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার এই নিয়োগ পরীক্ষার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, তারা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পায়নি। তবে রিটকারীদের আইনজীবী বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর হাইকোর্টের আদেশের কপি যে গ্রহণ করেছে, সেই রিসিভিং কপি আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) শীর্ষক অপারেশন প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত কম্পাউন্ডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবেশপত্রের সূচি অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে এই পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে কম্পাউন্ডার পদে নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে কয়েকজন পরীক্ষার্থীর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার এই নিয়োগ পরীক্ষার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন। ওই আদেশে আগামী ছয় মাস এই পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। কিন্তু আদেশ জারির তিন দিনের মাথায় নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছে অধিদফতর।
রিটকারীদের একজন লাকি আক্তার বলেন, বাংলাদেশ ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড থেকে যাঁরা ডিপ্লোমা পাস করেন, তাঁদের জন্য এই কম্পাউন্ডার পদটি অনেক কাক্সিক্ষত। এর আগেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ডিপ্লোমা পাস প্রার্থীরা আবেদন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার শুধু এইচএসসি/সমমান পাস প্রার্থীদের কাছে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা যারা ডিপ্লোমা পাস করেছি, তারা বঞ্চিত হচ্ছি। লাকি আক্তার বলেন, কম্পাউন্ডার পদটিতে আমাদের সিনিয়ররা চাকরি করেন। ইউনানি ও আয়ুর্বেদিকে যাঁরা ডিপ্লোমা করেন, তাঁদের জন্য নির্ধারিত খুব বেশি চাকরি নেই। কয়েকটির মধ্যে কম্পাউন্ডার পদটি একটি। সেখানেও আমাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আবু জাহের বলেন, আমরা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পাইনি। আমাদের সঙ্গে কোনো পরীক্ষার্থী যোগাযোগ করেননি। কোনো পরীক্ষার্থীর সমস্যা থাকলে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করলে অবশ্যই সমাধানের উদ্যোগ নিতাম। আমরা নিয়ম মেনেই পরীক্ষা নিচ্ছি। তবে রিটকারীদের আইনজীবী সাথীকা হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বুধবারই ই-মেইলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডাকযোগেও পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর হাইকোর্টের আদেশের কপি যে গ্রহণ করেছে, সেই রিসিভিং কপিও আছে। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পাওয়ার পরও পরীক্ষা নেওয়া মানে আদালতের অবমাননা করা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের চারটি পদে নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তার মধ্যে একটি কম্পাউন্ডার পদ। সেখানে নিয়োগ যোগ্যতার ছকে লেখা আছে, এই পদে আবেদনের জন্য উচ্চমাধ্যমিক/সমমানের পাসসহ সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে এক বছরের প্রশিক্ষণ/সার্টিফিকেট কোর্স থাকতে হবে অথবা এসএসসি/সমমান পাসসহ সরকার অনুমোদিত বোর্ড/প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট (ইউনানি/আয়ুর্বেদিক/হোমিওপ্যাথিক) বিষয়ে প্রশিক্ষণ/সনদ থাকতে হবে। কিন্তু ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, সেখানে কম্পাউন্ডার পদে আবেদনের জন্য শুধু এইচএসসি/সমমান পাস যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। রিটকারীরা বলছেন, ২০১৮ সালের পর এই পদে নিয়োগের জন্য নতুন কোনো নীতিমালা হয়নি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এবার শুধু এইচএসসি প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হলো?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন