শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ট্রমা সেন্টার এখন ভুতের বাড়ি

পাঁচ বছরেও চালু হয়নি

এম এ কাইয়ুম, পদ্মাসেতু উত্তর থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। গণপরিবহন ও মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। কারণ আশে-পাশের এলাকায় নেই পর্যাপ্ত হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ও ট্রমা সেন্টার। রয়েছে একমাত্র শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রতিদিনই রোগীর চাপ থাকে অনেক বেশি। এছাড়া পদ্মাসেতু উদ্ধোধনের পর এই সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। নিয়মিত রোগীর পাশাপাশি দুর্ঘটনার রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, শ্রীনগর-দোহার, শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ আন্তঃসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নানা সময়ে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘরে নির্মাণ করা হয় এই ৩ তলার ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার ভবনটি। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসায় নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টার। গত ২০১৫ সালে কাজ শুরু করে ৪ বছর সময় ব্যয়ে ২০১৮ সালে শেষ হয় হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ। কিন্তু প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টারটি। ফলে ভবনটি এখন নেশাখোরদের আড্ডারস্থল ও ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
দুইবারে ট্রমা সেন্টারের ভবন নির্মাণে মোট সময় ব্যয় হয় ৯ বছরেরও অধিক। নির্মিত হওয়ার পর গত ৫ বছর ধরে পড়ে আছে অব্যবহৃত ও অকার্যকর অবস্থায়। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্টারটি নির্মিত হলেও কেউ কোন সুফল পাচ্ছেন না। বরং পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যক্রমহীন হয়ে পরেছে ভবনটি। গত কয়েক বছর ধরে চোরেরা রাতে ও দিনের বেলায় কয়েকটি কক্ষের ফ্যান, বিদ্যুতের বাল্বসহ অনেক যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ মুন্সীগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরা বলেন, এখনও ভবনটি হস্তান্তর করা হয়নি। হস্তান্তরের জন্য জেলা সিভিল সাজর্ন বরাবরে চিঠি দিয়েছি। অতিসত্তর ভবনটি হস্তাস্তর করবো।
সরজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবা দূরে থাক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির অবস্থা বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে উঠে গেছে আস্তরণ, মেঝেতে জমেছে শেওলা ও আগাছা আর লোহার কাঠামোগুলোতে ধরেছে মরিচা। চর্তুদিকে ঝোপ জঙ্গলে ভরে গিয়ে দেখতে অনেকদিনের পরিত্যক্ত ভবনের মত মনে হয়। মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামও ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে এখানে ওখানে। নষ্ট হতে থাকা অবকাঠামো, বন্য গাছ লতায় ভরে ওঠা ভবনটির অভ্যন্তরে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। এসব সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে ভবনের কার্যক্রম চালু করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা মাকসুদা বেগম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতসহ হাত পা ভাঙ্গা রোগী আসে। কিন্তু ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় যেতে যেতে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়ে পড়ে ও অনেক রোগী মারাও যায়। ট্রমা সেন্টারসহ একটি নিউরো হাসপাতাল চালু থাকলে সকল রোগীই চিকিৎসা পেত।
জসিম উদ্দিন বলেন বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে চোরেরা হাসপাতালের রুমের সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। এইতো কয়েকদিন আগে পুলাপাইনরা দিনের বেলায় এক চোরকে ধরে মারপিট করতেছে আমি না গেলে মেরেই ফেলতো। পরে পুলিশ এসে চোরকে নিয়ে যায়।
ট্রমা সেন্টারে পাশে মোটরপার্টস বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৪/৫ বছর যাবৎ এই হাসপাতালটি তৈরি হলেও এখনও চালু না হওয়ায় ঝোপ জঙ্গলে হাসপাতালটি ভুতের বাড়িতে পরিনত হয়েছে। রাতের বেলায় এখানে এলাকার নেশাখোরদের আড্ডার জায়গা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এমপি মহোদয় নজর দিয়ে হাসপাতালটি চালু করা খুবই দরকার।
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তোহা মো. শাকিল ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একমাত্র আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। এখানে যে আমাদের ডা. রয়েছে তাদের দিয়ে এ চাপ সামলা যায়। কিন্তুু পদ্মাসেতু উদ্ধোধনের পর থেকে যে পরিমাণ দুর্ঘটনায় আহত রোগী আসছে তাতে আমরা চাপ সামলাতে পাচ্ছি না। পাশে আমাদের একটি ট্রমা সেন্টার রয়েছে সেটা ৩/৪ বছর হলো এখনও উদ্ধোধন না হওয়ায় সেখানে মাদক ও জুয়ার আড্ডায় পরিনত হয়েছে। ট্রমা সেন্টার চালু হলেই রোগী চাপটা কমে যাবে।
এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এই বিষয়ে আমি টিএস-এর সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে আপনাদের জানাতে পারবো। আপনি একটু গণপূর্তের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন