বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি গতকাল মধ্যরাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করেছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গত ১১ দিনে তিনটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আগের দু’টি নিম্নচাপ দুর্বল স্থল নিম্নচাপ ও লঘুচাপ হয়ে কেটে যায়। গতকাল শুক্রবার সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশে ভ্যাপসা গরম কাটতে শুরু করে এবং মেঘ-বৃষ্টির ঘনঘটা তৈরি হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলীয় চর ও দ্বীপাঞ্চলের নিস্নাঞ্চলসমূহে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা দেয়া হয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গতকাল রাতে বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল মধ্যরাতের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করছিল।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উঁঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা স্থানভেদে এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৬.৫ এবং সর্বনিম্ন রাজারহাটে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪ ও সর্বনিম্ন ২৬.৪ ডিগ্রি সে.। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজারহাটে ৬৯ মিলিমিটার। এ সময়ে দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন