শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সিএমএসএমই খাতে ঋণ বাড়াতে ৪৬ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাতে ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত মেনে গত বুধবার পর্যন্ত ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে। সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের ঋণে ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ঋণচুক্তি অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাসের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. ওবায়দুল হক, পরিচালক মনোজ কুমার হাওলাদার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তহবিলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত এই তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করবে।
প্রাথমিকভাবে স্কিমটির মেয়াদ হবে তিন বছর। আর গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। তহবিলের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রয়োজন বিবেচনায় তা বাড়ানো হবে। সাধারণত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সুবিধা গ্রহণ করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে।
এবার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বেলায় এই সুবিধা বহাল রাখা হলেও বেসরকারি, বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শর্ত যোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শর্তে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ/বিনিয়োগের হার ১০ শতাংশের কম হতে হবে, ন্যূনতম ৩ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একইসঙ্গে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নেয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণ-আমানত অনুপাত, তারল্য অবস্থাসহ একাধিক সূচক বিবেচনায় নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শাখা, উপশাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমেও এই ঋণ বিতরণ করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বিষয়ে সম্প্রতি একটি নীতিমালা জারি করেছে। তাতে উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করতে ক্লাস্টারভিত্তিক তালিকা তৈরি করে মোট ঋণ বিতরণের হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
ক্লাস্টার তালিকার মধ্যে রয়েছে-কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার, ডিজাইন ও সাজসজ্জা, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত শিল্প।
অগ্রাধিকার ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক শিল্প, পর্যটন শিল্প, হোম টেক্সটাইল সামগ্রী, নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার), অটোমোবাইল প্রস্তুত ও মেরামতকারী শিল্প, তাঁত, হস্ত ও কারুশিল্প, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি (এলইডি, সিএফএল বাল্ব উৎপাদন)/ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প/ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়াল উন্নয়ন শিল্প, জুয়েলারি, খেলনা তৈরি, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ শিল্প, আগর শিল্প, আসবাবপত্র শিল্প ও ইল/কম্পিউটার/টেলিভিশন সার্ভিস খাত ইত্যাদি
এসব ক্লাস্টারের আওতায় নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা এবং যে কোনো দুর্যোগে (যেমন-নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ভবনধস, কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারী ইত্যাদি) ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিতে হবে।
বিতরণ করা মোট ঋণের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে বিতরণ করার কথাও বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ, আদায় ও সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয় চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সময়ে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন