জালিয়াতির মাধ্যমে রিট ফাইল এবং আদালতের সময় নষ্টের দায়ে চাঁদপুরের ‘বালুখেকো’ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে ‘ঘৃণিত জনপ্রতিনিধি’ আখ্যা দিয়েছেন হাইকোর্ট।গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ আখ্যা দেন আদালত। এর কারণে সেলিমকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই রীটকারীকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।জমা না দিলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে তাদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি মো: ইকবাল কবিরের ডিভিশন বেঞ্চ গত ৯ জুন এ রায় দেন।গতকাল ২১ পৃষ্ঠার এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়।রায়ে আদালত বলেন, সেলিম চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঘৃণিত কাজ করেছেন।তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ব্যবহার করে অবৈধ,অনৈতিক ও জনস্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এর আগে প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলনের বৈধতা নিয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়।সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুর হাসান রিটের শুনানিতে অংশ নেন।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর।আর জাতীয় সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয় ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অর্থ ছাড়ের জন্য গত বছরের ৪ নভেম্বর ভিসি বরাবরে চিঠি দেয়।ওই বছরের ১৪ অক্টোবর জমির মূল্যহার পরীক্ষা ও সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলন সংশোধন চেয়ে গত বছরের নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সেলিম খান ও অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়।চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।প্রতিবেদন অনুযায়ী,মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা।কিন্তু হঠাৎ উচ্চ মূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে,সেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে।অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা।এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ১৪ অক্টোবরের (মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন) এবং ৪ নভেম্বরের (১৯৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন) স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও তার ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন।গত বছর করা পৃথক রিটে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ৯(১) (ক) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন নির্ধারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।সেলিম খানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ররুল দেন। অপর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। পৃথক রুলের একত্র শুনানি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন