আল্লাহতালা এরশাদ করেন: প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা আলে ইমরান ১৮৫)। আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন : আপনি বলুন, যে মৃত্যু থেকে তুমি পলায়ন করো, নিশ্চয়ই তা তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। অতঃপর দৃশ্য-অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতার দরবারে তোমাদের উপস্থিত করা হবে আর তোমাদের আমল সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন। (সূরা জুমআ ৮)। ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিদায়াতুল হেদায়া গ্রন্থে লিখেছেন : আমি আমার অন্তরকে আমলে আগ্রহী হওয়ার জন্য অনেক উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু সে এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে বটে, তবে আমলের উপর উঠতে পারেনা।কেন পারেনা? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আমি দেখলাম যে, সে তার মৃত্যুকে অনেক দূরে মনে করে, ফলে তার ভেতর আত্মগর্ভ অহংকার ও দীর্ঘ স্বপ্ন বাসা বাঁধে। বিধায় সে উদাস হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এই লোকটিকেই যদি বলা হয় যে, আগামী পরশু তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তাহলে এই সময়ের মধ্যে আল্লাহর নাফারমানি হয় এমন কোন কাজই সে করবে না। আপাদমস্তক আমলে ডুবে থাকবে। অতএব মৃত্যুর স্মরণ আমলি জিন্দেগি গঠন করার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: স্বাদ বিনষ্টকারী (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। (বাইহাকী)। আরো বর্ণিত হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন আমরা ১০ জন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলাম। তখন একজন আনসারী সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ! জ্ঞানী ও চালাক কোন ব্যক্তি? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন অধিক মৃত্যুর স্মরণকারী ও মৃত্যুর আগে মৃত্যুর জন্য অধিক প্রস্তুতি গ্রহণকারী ব্যক্তি। ওই সমস্ত জ্ঞানী লোক সম্মানের সাথে দুনিয়া থেকে চলে যায় এবং আখেরাতেও সম্মানিত হয়। (ইবনে মাজাহ)।
হযরত বারা ইবনে আঝিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এক জানাজায় আমরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, দেখলাম তিনি কবরের কিনারায় বসে কাঁদা আরম্ভ করলেন এত কাঁদলেন যে নিচের মাটিও ভিজে গেল। অতঃপর বললেন হে আমার ভাইয়েরা! এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। (ইবনে মাজাহ)। হযরত ওসমান গনি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন এত কাঁদতেন যে তার দাড়ি মোবারক ভিজে যেত এবং বলতেন কবর আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে প্রথম ঘাঁটিতে ধরা খেয়ে যাবে সে অন্যান্য ঘাঁটিতেও ধরা খেয়ে যাবে। (ফাজায়েলে আমল)।
হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একদিন এক মুমূর্ষু ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। তখন ওই ব্যক্তির মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। তিনি এই লোকটির মৃত্যুর ভয়াবহ অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে গেলেন।সেখান থেকে তিনি বাড়িতে ফিরলেন এমন ভাবে যে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। বাড়ির লোকজন খাওয়ার জন্য তাকে ডাকলেন। তিনি বললেন: তোমাদের খাবার তোমাদের জন্য কল্যাণ হোক, আমি যে অবস্থা দেখেছি তার জন্য আমল করতে থাকবো, যতক্ষণ না তার সাথে সাক্ষাৎ হয়। মৃত্যুর স্মরণ সর্বদা অন্তরে জাগ্রত থাকলে অনেক কল্যান সাধিত হয়, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো : (এক) দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমে যায়। (দুই) আখেরাতের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। (তিন) দুনিয়াবী যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা লাঘব হয়। (চার) আত্মা দুনিয়াবী স্বাদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। (পাঁচ) কঠোর হৃদয়কে গলিয়ে দেয়। (ছয়) বেশি বেশি তওবা নসিব হয়। (সাত) বেশি বেশি এবাদত করার প্রতি আগ্রহ জন্মে। (আট) ইবাদত প্রাণবন্ত ও একাগ্র চিত্তে হয়। (নয়) অল্পে তুষ্টি নসিব হয়। (দশ) আল্লাহ অভিমুখী বানিয়ে দেয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে, মৃত্যুর কথা হৃদয়ে জাগ্রত রেখে, আল্লাহতালা আমাদেরকে আমলি জিন্দেগি গঠন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন