সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে নিদারুণ কষ্টে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা

সংসার চালাতে হিমশিম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ধার-দেনা করে চলছে স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজন। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। চাল, ডাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজ, তেল, ডিম, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের দামে আগুন।
পরিবহন ভাড়ার সাথে বাসা ভাড়া, সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয়, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবার ব্যয়ও বাড়ছে। সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এতে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। হতদরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার চলছে। বোবা কান্না মধ্যবিত্ত পরিবারে। তিন বেলা খাবার জোগাড় করতেই মাসিক আয়ের বিরাট অংশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাছ গোশত খাওয়া এখন শুধুই বিলাসিতা। শপিং কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মতো খরচ বাদ দিয়েছেন অনেকে। একান্ত জরুরি না হলে চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছেন না অনেকে। এতো সব কৃচ্ছতা সত্ত্বেও মাস শেষ হওয়ার আগেই হাত খালি হয়ে যাচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষের বসবাস। তাদের বিরাট অংশ স্বল্প ও সীমিত আয়ের। সরকারি-বেসরকারি তিনটি ইপিজেডসহ অসংখ্য শিল্পকারখানা থাকায় জনসংখ্যার বিরাট অংশ শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকে দিন মজুর। আছেন চাকরিজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবীও। মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় সবাই এখন রীতিমত নাজেহাল।
করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধি জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। দেশে আট মাসের মধ্যে দুই দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে বেড়েছে সব ধরনের পণ্যের দাম। ভোজ্য তেল, আটা, ময়দা, চাল, ডালসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার পর ভোগ্যপণ্যের বাজারে রীতিমত আগুন লাগে। গরীবের মোটা চালের দামও এখন ৫০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম আরো এক দফা বাড়িয়ে দেওয়ায় তা এখন সাধারণের নাগালের বাইরে। বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পরও লাগাম টানতে নেই কোন ব্যবস্থা। ইচ্ছে মতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাতে ক্রেতারা জিম্মি। এ অবস্থায় সরকারি তরফে ফের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পানির দাম বাড়নোর ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পাড়ায় মহল্লায় বাড়ছে বাসা ভাড়া।
এদিকে সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। বরং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকে বেকার হয়েছেন। অনেকের বেতন ভাতা অনিয়মত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে রফতানি কমছে। রফতানিমুখী কলকারখানা সচল রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটে অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাও কোথাও চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এতে বেকারত্ব বাড়ছে।
নিত্যপণ্যের চড়া দামের সাথে তাল মিলাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। প্রায় সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রতিটি পরিবারই এখন মিতব্যয়ী। তবুও মিলছে না সমাধান। মাস শেষ হওয়ার আগেই সংসারে শুরু হয় টানাটানি। এ সময় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে।
অপরদিকে বাজারে মুরগি, ডিম, কাঁচা মরিচের দাম কমলেও বেড়েছে সয়াবিন তেল, চিনির দাম। গতকাল শুক্রবার বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৭০ টাকা, লেয়ার ২৯০ টাকা ও সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকায়। এছাড়া ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। তবে দেশি মুরগি যথারীতি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, ৫ লিটার ৯১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চিনি ৯০-৯২ টাকায়, আটা ৫৬-৫৮ টাকা, আদা ১০০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি আলু ৩০ টাকা, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ১৬০-১৭০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা, গরুর গোশত কেজিপ্রতি ৭৫০-৮০০ টাকা, খাসি ৮০০-৯০০টাকা। বাজারে সবজির সরবরাহ প্রচুর। তবে দাম ঊর্ধ্বমুখী। ২৫ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। মাছের অভাব নেই বাজারে। তবে দাম বেশি। সাগরে বৈরি আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে যাচ্ছেন। তাতে সামনের দিনগুলোতে মাছের দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন