দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কর্মবিরতির পর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাজে ফিরেছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের মধ্যে অধিকাংশ বাগানে গতকাল সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে চা শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। এ সময় কোনো কোনো বাগানে আনন্দ মিছিলও করতে দেখা গেছে।
এদিকে চা শ্রমিকরা বলছেন, টানা কর্মবিরতির পর কাজে ফিরতে পেরে তারা ‘খুশি’। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ১২০ টাকা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ১৭০ টাকা মজুরির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তারা কাজে ফিরেছেন। গতকাল জেলার চা বাগানগুলোতে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় আজ থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
গত ৯ অগাস্ট থেকে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশের মতো মৌলভীবাজার জেলার সবগুলো চা বাগানে প্রথমে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি শুরু করেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করেনা। এরপর ২১ অগাস্ট রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী আসন্ন দূর্গাপুজার আগে নতুন মজুরি ঘোষণা করবেন।
তার আগ পর্যন্ত চলমান ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয় চা শ্রমিকদের। সেই প্রস্তাব মেনে প্রথমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও একদিন পর আবারও কর্মবিরতিতে নামেন শ্রমিকরা। অবশেষে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তাদের আন্দোলনের অবসান হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা সব বাগানেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল কোনো কোনো বাগানে নগদ (একদিনের মজুরিতে) কাজ করছেন শ্রমিকরা। এর মধ্য দিয়ে চা বাগানগুলোতে প্রাণ ফিরে এসেছে।
এদিকে কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ায় চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে উপজেলার ২২টি চা-বাগানে কয়েক লাখ কেজি গ্রীনলিফ চা পাতা বিনিষ্ট হয়ে গেছে। আন্দোলন শুরুর আগে শ্রমিকরা এই পাতাগুলো বাগান থেকে উত্তোলন করে ফ্যাক্টরিতে এনে মজুদ করে রেখেছিল। পরে আন্দোলন শুরু হয়ে যাওয়ায় পাতাগুলো আর প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি। ফলে এসব বাগানে কয়েক কোটি টাকার গ্রীনলিফ চা পাতা ফ্যাক্টরিতে থেকে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় পাশাপাশি বাগানে থাকা চা-গাছের নতুন কুঁড়ি সপ্তাহ পর পর উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও গত ১৫ থেকে ২০ দিন থেকে চলমান আন্দোলন থাকায় সেই চা পাতার কুঁড়িগুলো উত্তোলন না করায় সেগুলোও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
ডানকান ব্রাদার্স এর মালিকানাধীন লংলা-হিঙ্গাজিয়া চা-বাগানের শ্রমিকদের উত্তোলিত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কেজি, লোহাইউনি-হলিছড়া চা-বাগানে প্রায় ১৫ হাজার কেজি, হাজি নগর চা-বাগানে প্রায় ১৩ হাজার কেজি, এবং অন্যান্য বাগানসহ কয়েক লাখ কেজি গ্রীণ লিফ চা পাতা শেড ঘরে পঁচন ধরে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন