বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মহান শক্তি যুদ্ধ আসন্ন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বে প্রকাশ

ফরেন পলিসি | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিগত কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব আশাবাদ প্রদান করেছে যে, প্রধান পরাশক্তিগুলির বেশিরভাগই সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উপভোগ করবে এবং সশস্ত্র সঙ্ঘাত এড়িয়ে তাদের বিরোধগুলির সমাধান করবে। তবে, বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব বলছে যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান চালিকা শক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার মধ্যকার নতুন শীতল যুদ্ধ শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

বর্তমান বহুমুখী বিশে^র ক্ষমতার রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও শীর্ষ শক্তি, কিন্তু চীন সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে দ্বিতীয় স্থান দখল করতে উঠে এসেছে। ইউরোপও একটি অর্থনৈতিক এবং নিয়ন্ত্রক পরাশক্তি। রাশিয়া পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রেখেছে। এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের মতো প্রধান শক্তিগুলি একটি নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে।

বাস্তববাদীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, বহুমুখি বিশ^ ব্যবস্থাটি অস্থিতিশীল এবং অবমূল্যায়নের কারণে বড় যুদ্ধের সম্ভাবনায় ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ প্রতিটি দেশকে একাধিক সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের বিষয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ইউরোপে রাশিয়া সাথে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সাথে একযোগে সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এরমধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মোকাবেলায় শেষ অবলম্বন হিসাবে সামরিক শক্তির ব্যবহার বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে, পরাশক্তিগুলির ত্রিমুখী যুদ্ধ আর প্রশ্নাতীত নয়।

রাষ্ট্রগুলো যখন তাদের প্রতিপক্ষের শক্তি বা লড়াই করার সংকল্প নিয়ে সন্দেহ করে, তাদের চ্যালেঞ্জ করে, তখন তা প্রায়শই যুদ্ধে পরিণত হয় এবং কখনও কখনও বড় যুদ্ধে রূপ নেয়। চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এর প্রমান। কিছু বাস্তববাদী বিশেণজ্ঞ সতর্ক করেছিলেন যে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আসছে এবং এখনও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এই যুদ্ধ ন্যাটো জোটের সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং এমনটে ঘটলে এটি একসময় সরাসরি মার্কিন-রাশিয়া সংঘর্ষে পরিণত হবে।

এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ান নিয়ে ভুল হিসাব করতে পারেন এমন আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বাইডেন বলেছেন যে, তিনি তাইওয়ানকে রক্ষা করবেন, তবে তার নিজের হোয়াইট হাউস তার বিরোধিতা করেছে, যা ত্রিপক্ষীয় অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া, ইরানও যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে বাইডেনের সংকল্পকে মূল্যায়ন করতে ভুল করে, তাহলেও যুদ্ধ হতে পারে।

বাস্তববাদীরা ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করেছেন এবং তারা চীনের উত্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের আপেক্ষিক পতন নিয়ে উদ্বিগ্ন। আধিপত্যের রূপান্তর তত্ত্ব বলে যে, একটি মহাশক্তির পতন এবং একটি উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থান প্রায়শই যুদ্ধে পরিণত হয়। যুদ্ধের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিশ্ব নতুন প্রযুক্তির ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ অনুভব করছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং যোগাযোগ, সংযোজক উৎপাদন, রোবোটিক্স, হাইপারসনিক মিসাইল, নির্দেশিত জ¦ালানীশক্তি বিশে^র অর্থনীতি, সমাজ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটানোর সুযোগ দেয়।

অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, বিশ^ সামরিক ক্ষেত্রেও একটি নতুন বিপ্লবের প্রাক্কালে অবস্থান করছে। এবং এই নতুন প্রযুক্তিগুলি সামরিক বাহিনীগুলিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালের ট্যাঙ্ক ও বিমানের মতো বাড়তি সুবিধা দিয়ে যুদ্ধকে আরও সম্ভাবনাময় করে তোলে। নূন্যতমভাবে, এই নতুন অস্ত্র ব্যবস্থাগুলি ক্ষমতার ভারসাম্যের মূল্যায়নকে বিভ্রান্ত করতে পারে, যা পরাশক্তিগুলির যুদ্ধের ঝুঁকিতে অবদান রাখতে পারে।

এমনকি, তকথাকথিত পশ্চিমা উদারতাবাদ তত্ত্বও সংঘর্ষের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্ব বলে যে, একটি গণতন্ত্র অন্য গণতন্ত্রকে সহযোগিতা করে। কিন্তু আজ আন্তর্জাতিক উদারতাবাদ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র্র ‘গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে যুদ্ধ’ ঘোষণা করেও নিশ্চিতভাবে এখনও সউদি আরবের মতো কিছু অগণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু বিশ্বব্যবস্থা ক্রমবর্ধমানভাবে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, তার গণতান্ত্রিক ন্যাটো মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও ইরানের সংশোধনবাদী স্বৈরাচারী পক্ষতে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিবাদী ইতালি এবং সাম্রাজ্যবাদী জাপানের বিরুদ্ধে মুক্ত বিশ্বের সঙ্ঘাতের প্রতিধ্বনি সনাক্ত করতে কারোর স্টেথোস্কোপের প্রয়োজন নেই।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার বিভাজন শুধুমাত্র শাসনের বিষয় নয় বরং জীবনধারার বিষয়। শি এবং পুতিনের বক্তৃতা ও লেখাগুলি প্রায়শই একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব এবং গণতন্ত্রের ব্যর্থতা সম্পর্কে আদর্শিক উদহারণ হয়ে ওঠে। পছন্দ হোক বা না হোক, গণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সরকারগুলি তাদের জনগণের স্বার্থ জন্য আরও ভালভাবে রক্ষা করতে পারে কিনা, এই প্রতিযোগিতায় সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আরও বিপজ্জনক আদর্শিক উপাদান যোগ করে। দুর্ভাগ্যবশত, ইতিহাসকে সঠিক মূল্যায়নের দিকে প্রবাহিত করার মুহূর্তগুলি প্রায়শই বড় শক্তিগুলির যুদ্ধের পরেই আবির্ভূত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন