প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতাপূর্ণ করতে প্রতিবছর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সম্পাদিত হয়। এ চুক্তি যোগ্য কর্মকর্তাদের সঠিক মূল্যায়নেও ভূমিকা রাখে। আর এর ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো এবারও সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন যোগ্য কর্মকর্তারা। উদাহরণস্বরূপ দেখা যায়, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ক্যাটাগরির ১৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানা তৃতীয়বার শীর্ষস্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)। প্রতিষ্ঠানটি ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৩৭ নম্বর পেয়েছে। আগের দু’বার এবং গত মঙ্গলবার এপিএ বাস্তবায়নে আর্থিক খাতের রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেয়ায়িত ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে প্রকাশিত সূচকে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন। যদিও ইতোমধ্যে গত দু’বারের এবং সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটিকে শীর্ষে রাখতে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম গত রোববার রাষ্ট্রমালিকানাধীন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততার মূল্যায়ন করেন। আর এর ফলস্বরূপই মূল্যায়ন পেয়েছেন মো. আফজাল করিম। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন থেকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিএইচবিএফসি’র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অরুন কুমার চৌধুরী ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব, নির্দেশনা এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে এতদিন মো. আফজাল করিমের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটিই শুধু এপিএ বাস্তবায়নে সাফল্য দেখায়নি, সদ্য যোগদান করা বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক গত বছরের মতো এবারও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর প্রায় ৯৬ দশমিক ৬৬। যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ক্যাটাগরিতে সোনালী ব্যাংকের সর্বোচ্চ নম্বর। ‘অতি উত্তম’ মানদণ্ডে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
নিজ দায়িত্বে থাকাকালীন একটি প্রতিষ্ঠান টানা তৃতীয়বার শীর্ষস্থান অর্জন করায় এবং বর্তমান দায়িত্ব পাওয়া সোনালী ব্যাংকও টানা দ্বিতীয়বার প্রথম স্থান অর্জনের সাফল্য পাওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফজাল করিম বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয় সেখানে বিভিন্ন ইন্ডিকেটর ও টার্গেট থাকে। সেসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিবিড় তদারকির প্রয়োজন হয়। তদারকি করে আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেটা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান থাকে। এটা পূরণের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে এটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যা প্রতিষ্ঠান দু’টির মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরন্তর পরিশ্রমের ফসল। সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ক্যাটাগরিতে সোনালী ব্যাংকের পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৯৩ দশমিক ৫৪। এরপর ৯১ দশমিক ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের অবস্থান চার। রাষ্ট্রমালিকানাধীন এ ব্যাংকটির ঝুলিতে নম্বর জমা পড়েছে ৮৮ দশমিক ৭৪। ৮০ দশমিক ৮২ নম্বর নিয়ে পাঁচে রূপালী ব্যাংক। তালিকার সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি ৭৭ দশমিক ৫৭ নম্বর পেয়েছে।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেয়ায়িত ব্যাংকগুলোর তালিকায় শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। তালিকায় প্রথম হওয়া ব্যাংকটি পেয়েছে ৯৭ দশমিক ৩১। অল্পের জন্য এ শীর্ষস্থান বঞ্চিত হওয়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পেয়েছে ৯৭ দশমিক ১৬ নম্বর। ৯৬ দশমিক ১১ নম্বর নিয়ে এ তালিকায় তৃতীয় হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এ ক্যাটাগরিতে এরপরের অবস্থানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। তাদের অর্জন ৯৬ দশমিক শূন্য ৬। তালিকার শেষে অবস্থান করে নিয়েছে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি পেয়েছে ৯১ দশমিক ৫৫।
এছাড়া নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের পর দ্বিতীয় স্থানে জায়গা মজবুত করেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ। তারা পেয়েছে ৯৭ দশমিক ১৮ নম্বর। এরপরে ৯৬ দশমিক ২৬ নম্বর পেয়ে তিনে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট। তারা পেয়েছে ৯৬ দশমিক ২৬। এরপরে যথাক্রমে ৮৬ দশমিক ৮৭ নম্বর নিয়ে জীবন বীমা করপোরেশন, ৮৩ দশমিক ৪৫ পেয়ে মাইকোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, ৮২ দশমিক ৩৬ নিয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি ও এ খাতে সবশেষে ৮২ দশমিক ১২ নম্বর নিয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশন। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। ১৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষস্থানেই ৪ প্রতিষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন