শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাঠমিস্ত্রি থেকে অস্ত্রের কারিগর!

বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে কারখানা আবিষ্কার : ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। ধীরে ধীরে বনে যান অবৈধ অস্ত্রের কারিগর। মাত্র কয়েক দিনে সুনিপুণ হাতে বানিয়ে ফেলেন বন্দুক, পিস্তল। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ কাজ করলেও ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের আড়ালে। নিজেকে আড়াল করতে দিনের বেলায় কৃষি কাজ করতেন। আর রাতে দুর্গম পাহাড়ে কারখানায় তৈরি করতেন অস্ত্র। এসব অস্ত্র মাদক কারবারি, নৌ-দস্যু ও মহাসড়কে ডাকাত চক্রের সদস্যরা ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনে নেন।

অবৈধ অস্ত্রের এ কারিগরের নাম মো. জাকেরুল্লাহ। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বলে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। সেখানে অভিযান চালিয়ে দেশীয় ৮টি ওয়ান শুটার গান, ২টি টু-টু পিস্তল এবং অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, এ সময় অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকেরুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার র‌্যাব চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ। তিনি বলেন, অভিযানের সময় অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকেরুল্লাহর কয়েকজন সহযোগী ছিলেন। তারা এ সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, সেখানে অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি করা পর্যন্ত তিনটি গ্রুপ কাজ করে। একটি গ্রুপ অস্ত্র বানায়। এ কারিগরদের মূল হোতা জাকের। তাকে অস্ত্র তৈরির কাজ দেয় দালালরা। আরেকটি গ্রুপ অস্ত্রের ক্রেতা নিয়ে আসে।

একসঙ্গে ৫ থেকে ১০টি অস্ত্রের অর্ডার নেন জাকের। এসব অস্ত্র তৈরি করতে ৫ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এসব অস্ত্র তৈরিতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এগুলো তারা দালালদের কাছে সাত থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এসব অস্ত্র কিনে নেন। আর অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তা বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে দশ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

এর মধ্যে ওয়ান শুটার গান, পয়েন্ট টু-টু রাইফেল রয়েছে। প্রকারভেদে অস্ত্রের দামের পার্থক্য রয়েছে। ছোট ওয়ান শুটার গানের মতো অস্ত্র প্রস্তুত করতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। জাকের প্রতিটি অস্ত্রের জন্য এক হাজার টাকা করে পেতেন। অর্ডার পেলে প্রতিমাসে ২০-২৫টি অস্ত্র তৈরি করতে পারেন জাকের।

র‌্যাব জানায়, এসব অস্ত্রের তিন ধরনের ক্রেতা রয়েছে। মাদক কারবারিরা এসব অস্ত্র কেনে। উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী একটি ডাকাত ও দস্যুপ্রবণ এলাকা। এখানকার নৌ-দস্যুরাও এসব অস্ত্রের বড় ক্রেতা। এছাড়া মহাসড়কে যারা ডাকাতি করে তারাও এসব অস্ত্রের ক্রেতা। দালাল ও ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্যদের পাকড়াও করা গেলে এ চক্রের বাকি পরিকল্পনা জানা যাবে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা। উদ্ধার করা সব অস্ত্রই সচল। এসব অস্ত্র দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি।

র‌্যাব জানায়, অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে ভাড়া করা বাড়িতে এনে কাজ করতেন। প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা তারা কিনতেন। পরবর্তীতে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সব যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল। একটি অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুরি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাদিই র‌্যাব-৭ কারখানাটি থেকে উদ্ধার করে। যন্ত্রসমূহ পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে তারা তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে আসতো। দুর্গম এলাকায় ওই কারখানাটি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতো তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন