এক যুগ পরে আবার! ২০১০-এর মতোই ভয়াবহ বন্যায় বেহাল পাকিস্তান। নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন সে দেশের এক-তৃতীয়াংশ। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১,১০০ জনের। একাধিক উপগ্রহচিত্রে উঠে আসা বানভাসি পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। পাকিস্তানের জন্য বিশ্বের দরবারে ১৬ কোটি ডলারে অর্থসাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তারা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জানিয়েছেন, পড়শি দেশের এই বিপর্যয়ে তিনি ব্যথিত। কিন্তু সহমর্মিতার এই বার্তা সত্ত্বেও ভারতের সাহায্য নিতে তীব্র আপত্তির কথা জানালেন খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একই সঙ্গে শরিফ ফের তুললেন কাশ্মীর ইস্যু! প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রের ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়েও।
সপ্তাহখানেক আগের কথা। হার্ভার্ড থেকে আসা মার্কিন শিক্ষার্থীর সামনে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল- যুদ্ধ নয়, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি চায় পাকিস্তান। কাশ্মীর সমস্যা সমাধানেরও একমাত্র পথ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত নীরব থেকেছে। তবে বন্যাবিধ্বস্ত পড়শি দেশের জন্য উদ্বেগ প্রকাশে কার্পণ্য করেননি মোদী। কাকতালীয় ভাবে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, বন্যার জেরে দেশে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার মোকাবিলায় প্রয়োজনে ভারত থেকে কাঁচা সব্জি আমদানি করা যেতে পারে। ভারত নাকি সেই মতো প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিল বলে খবর করেছিল একাধিক সংবাদমাধ্যম।
এরই মধ্যে ফের বেসুরো গাইলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ফের কাশ্মীর ইস্যু তুলে শেহবাজ শরিফকে বলতে শোনা গেল, ''ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা যেতেই পারে যায়। কিন্তু এটা আমাদের কিছুতেই ভুললে চলবে না যে, কাশ্মীরে কিন্তু এখনও নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। রোজই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কাশ্মীরিদের। ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে জোর করে কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা রাজনীতি করার সময় নয়, জানি। করতেও চাই না। কিন্তু ভারতে যে ভাবে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, সে বিষয়টাও ভুলে গেলে চলবে না।’
তার মানে কি 'যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই' বার্তাটা নেহাতই লোকশোনানো স্লোগান ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর? নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহল তা-ই মনে করছে। তবে তিনি যে যুদ্ধ নয় শান্তির পক্ষে, সে কথা এ দিন ফের বলতে শোনা যায় শরিফকে। তার কথায়, ''যুদ্ধ চাই না। কারণ যুদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাতে লাভও নেই। শান্তির স্বার্থে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসতেও আপত্তি নেই। নিজেদের দারিদ্র দূরীকরণে আমরা আমাদের সামান্য সম্পদকেও কাজে লাগাতে চাই। কিন্তু তার আগে কাশ্মীর ও সীমান্ত সমস্যা মেটাতে হবে।''
কিন্তু তার নিজের দেশই তো এখন পানির তলায়! ভারতের সাহায্য না-নিলে পরিস্থিতি সামাল দেবে কী ভাবে পাকিস্তান? সূত্রের খবর, রাশিয়া থেকে গম, আর ইরান-আফগানিস্তান থেকে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী আমদানিই এখন প্রধান লক্ষ্য ইসলামাবাদের। সূত্র: টিওআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন