তিনি কখনো এমপি কখনো এসপি কখনো থানার ওসি আবার কখনো র্যাব-পিবিআই কর্মকর্তা পরিচয়ে জাহির করেন নিজেকে। আর এসব ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। পড়ালেখা করেছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। করতেন মুরগির ব্যবসা। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় পেশা বদলে ফেলেন। প্রতারণাকেই নেন পেশা হিসেবে। অবশেষে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে টাকা আদায়কালে র্যাবের হাতেই ধরা পড়েন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট থেকে প্রতারক বেলাল হোসেনকে (৩১) পাকড়াও করে র্যাব। এ সময় তার এক সহযোগী মো. ওসমানকেও (৫৩) গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, ২০২১ সালে পোলট্রি ব্যবসায় লোকসানের পর প্রতারণাকেই বেছে নেয় আয়ের পথ হিসেবে। এই প্রতারকের খপ্পড়ে পড়া বেশ কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, বেলাল দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। নিজেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, এমনকি হাটহাজারীর সংসদ সদস্য পরিচয় দিয়েও সে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক পর্যায়ে প্রতারণাই তার নেশায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, বছর খানেক আগে এক মুদি দোকানিকে ফোন করে সয়াবিন তেলের ‘ডিলার’ পরিচয় দিয়ে দাম বাড়ার তথ্য জানিয়ে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এর কিছুদিন পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেলাল নিজেকে ভুজপুর থানার এসআই পরিচয় দিয়ে স্থানীয় এক দফাদারের কাছ থেকে নয় জন ইউপি সদস্য প্রার্থীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে তাদের সাতজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। মাসখানেক আগে রাউজান উপজেলায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়। বেলাল শিশুটির বাবাকে ফোন করে ছেলের ময়নাতদন্ত না করাতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। পরবর্তী সময়ে সেই টাকা আদায় করে।
সম্প্রতি হাটাহাজারী উপজেলায় ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে কিছু বখাটে এক তরুণীর বাবাকে মারধর করে। পরবর্তী সময়ে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ওই মামলার বাদী তরুণীর বাবাকে ফোনে হাটহাজারী থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ১০ হাজার টাকা আদায় করে। পরপর দুইদিন ওসি এবং সার্কেল এএসপি পরিচয় দিয়ে ৫৩ হাজারের বেশি টাকা আদায় করে। এরপর নিজেকে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীর বাবার কাছ থেকে ফের টাকা দাবি করায় সেটি তার সন্দেহ হয় এবং র্যাবকে অবহিত করে। র্যাব বেলালের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য ভাড়া করা প্রাইভেট কার নিয়ে ঘোরাফেরা করত। মোবাইল ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার ভঙ্গিতে কথাবার্তাও বলতো। ধূর্ত বেলাল নিজে সামনে না এসে সহযোগীর মাধ্যমে টাকা আদায় করত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন