চারিদিকে প্রচন্ড গরম। অসহ্য গরমে মানুষ অসহায় আরো চলছে লোডশেডিংয়ের বাড়তি কষ্ট। এমনিতেই করোনা ভাইরাসের মহামারিতে পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। আসল কথা, মানুষ এখন প্রকৃতির কাছেই শান্তি পাচ্ছে। গাছ পালা তরু লতা মহান আল্লাহ তায়ালার অপার নিয়ামত। গাছ প্রকৃতির অপূর্ব শোভা। গাছহীন পৃথিবী মলিন। গাছের অস্তিত্ব মানে প্রাণের অস্তিত্ব, প্রাণীর অস্তিত্ব। যে অঞ্চলে যত গাছপালা, সেই অঞ্চল তত বেশি প্রাণবন্ত। গাছ ছাড়া বেঁচে থাকার উপায় নেই। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। ঝুঁকিহীন এক সুন্দরতম নিরাপদ বিনিয়োগ গাছ। সবুজ শ্যামল নিসর্গ মূলত গাছকে ঘিরেই। গাছ আমাদের জীবনের ছায়া।
প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছ অবিকল্প ভূমিকা পালন করছে । এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, পাশাপাশি চলছে নগরায়ণ, বাড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, বাতাসে সিসার পরিমাণ। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশগত বিরূপতায় আমরা মুখোমুখি হচ্ছি খরা, বন্যা, ঝড়, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের ভয়াবহ প্রতিকূলতার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে গাছ পালন করে উপকারী বন্ধুর ভূমিকা।
গাছ সৃষ্টির এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে, স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তা হতে উদগত করেছি নয়ন জুড়ানো সব ধরনের উদ্ভিদ। এটি আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি উপকারী বৃষ্টি এবং তা দ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান, শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর।’ (সূরা কাফ, আয়াত : ৭-১০।)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই লতা ও বৃক্ষ উদ্যানগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জলপাই বাগান সৃষ্টি করেছেন। তারা একে অন্যের মত এবং আলাদা। যখন গাছ ফলবান হয় তখন তোমরা গাছের ফল আহার করবে। আর ফসল তোলার দিনে তার দেয় প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না।’ (সূরা আনআম, আয়াত : ১৪১।)
‘তারা কি জমিনের প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কতো উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ (সূরা শোআরা, আয়াত : ৭-৮।) গাছ লাগানোকে হাদিস শরিফে উত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় যাকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়েছে। প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলমান একটি ফলবান বৃক্ষর চারা রোপণ করে, আর এতে ফল আসার পর সে নিজে অথবা অন্য কোনো মানুষ তা থেকে যা খায় তা তার জন্য সদাকা, যা চুরি হয়, যা কিছু গৃহপালিত পশু এবং অন্যান্য পাখপাখালি খাবে, এ সবই তার জন্য সদাকা।’ (বুখারি ও মুসলিম।)
গাছ লাগানোর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রিয় নবী (দ.) বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পার যে, কিয়ামত এসে গেছে, আর তোমার হাতে একটি গাছের চারা আছে তারপরও তা লাগিয়ে দাও।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ।) পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বন্যায় বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। এমনকি পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ-মহাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের দেশেরও সেই ঝুঁকি রয়েছে। গাছ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি রোধ করে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্র কমায় এবং শীতকালে বাড়ায়। গাছ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রতিরোধক হিসেবে মানুষের উপকার করে থাকে।
প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ গাছ। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। অকারণে আমরা গাছ কাটব না এবং শস্য নষ্ট করব না। জরুরি পরিস্থিতি তথা যুদ্ধের সময়ও নবীজী (দ.) গাছ কাটতে নিষেধ করছেন। সাহাবি ইবনে সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুল (দ.) বলেছেন- ‘মদীনার প্রত্যেক প্রান্তে সীমানা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যাতে গাছপালা মুন্ডাানো এবং কাটা না হয়। তবে যেগুলো উট খেয়ে ফেলে সেগুলো ব্যতীত।’ (আবু দাউদ।) এ পৃথিবী আমাদের। এখানে আমরা বসবাস করছি। আমাদের প্রজন্ম এখানে বেড়ে উঠছে। আমাদের কি উচিত নয়, যে পৃথিবীকে আমরা পেয়েছি, আমাদের প্রজন্মকে এরচেয়ে ও সুন্দর এরচেয়ে চমৎকার পৃথিবী উপহার দেয়া? তবেই তো আমরা যোগ্য পূর্বসূরী হতে পারব। এ পৃথিবীকে সুন্দর করতে হলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এই ছোট্ট মাতৃভূমিকে একসময় সবুজ-শ্যামল দেশ বলা হতো। আফসোস! এদেশে সবুজের সমাহোর দিন দিন কমে আসছে। বনভূমি উজাড় হচ্ছে। গাছ-পালা কাটতে কাটতে নূন্যতম বনভূমিও এখন নেই আমাদের।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ শীতও হচ্ছে। এমনও দেখা যায়, দিনে তীব্র গরম, রাতে তীব্র শীত। এই যে আবহাওয়ার পরিবর্তন এতে করে জনজীবন তো বিপর্যস্ত হচ্ছেই, নানান রোগবালাই আমাদের কাবু করছে। চিকুনগুনিয়াসহ কত মারাত্মক রোগ যে দেশবাসীকে ভুগিয়ে যাচ্ছে এবং আরো ভোগাবে তার ধারণাও করতে পারছে না বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতির আঘাত থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মত বিকশিত হতে দিতে হবে। দেশে বনায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সবুজের সমারোহ আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য বর্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় বৃক্ষরোপন করলে খুব বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। প্রকৃতিই সকাল বিকেল বৃষ্টি ঝরিয়ে গাছের পরিচর্যা করে। আসুন! এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে আমরা সবাই একটি করে বনজ, ঔষধি, ফলাদার-ছায়াদার বৃক্ষরোপন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সদাকায়ে জারিয়ার আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন