শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গমাতা সেতু : দক্ষিণের আরেকটি দুয়ার খুললো

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৫৯ এএম

বাংলাদেশ আর চীন। এই দুই দেশের অর্থায়নে কচা নদীর ওপর শুরু হয়েছিল স্বপ্নের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাজ। তাও ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। সেতুর দু’মাথা জোড়া লেগেছে।
হয়ে গেছে দুই পাড়ের রাস্তাও। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দুই মাস পর প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল ১০টায় বঙ্গভবন থেকে বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করেন।
এখন অপেক্ষা শুধু যাতায়াতের। সেতু চালুর ফলে পায়রার সঙ্গে মোংলা বন্দরের সরাসরি নিরবিচ্ছিন্ন সড়কযোগ স্থাপন হবে। লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষ, পণ্যবাহী ট্রাক দ্রুত পৌঁছতে পারবে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায়। তাতে করে সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। আপাতত সেতু দিয়ে যাতায়াতের অপেক্ষায় রয়েছেন কচা নদীর দু’পাড়ের মানুষজন।
পিরোজপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বেকুটিয়া ফেরিঘাটের কাছে সেতুটি নির্মানের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুতে ৯টি স্প্যান ও ১০টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। টোল প্লাজা, সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক, পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ১২ মিটার সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। সেতুটি নদীর তলদেশ থেকে ২৮ দশমিক ৯৮ মিটার উঁচু।
প্রায় ৮২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চায়না রেলওয়ে-১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করছে। মোট বরাদ্দের ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার ও ১৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা তৈরির জন্য চীন সরকারের অনুদানে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

কী উপকার হবে?
কচা নদীর প্রশস্ততা প্রায় এক কিলোমিটার হওয়ায় ফেরি পারাপারে প্রায় ৪৫ মিনিট লেগে যেতো। বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি ও স্রোত বেড়ে গেলে আরো বেশি সময় লেগে যেতো। এ ছাড়া ফেরিগুলো পুরোনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকতো। ফলে পিরোজপুরের পাড়েরর মানুষকে বরিশাল শেরই বাংলা হাসপাতালে আসতে পারতো না। তারা সরাসরি চলে যতো খুলনাতে।
এ ছাড়া, নৌকোয় করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না শিক্ষার্থীদেরও। আর অন্য পাড়ের বাসিন্দাদের সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কাজ করতে কিংবা হাট-বাজারে যেতে হয়রানির শিকার হতে হবে না। খরচ বাঁচবে। সরাসরি ট্রাক চলে যেতে পারবে ভারত সীমান্তে।
সেতুটি চালু হলে বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যাতায়াতে সময় অনেক কমবে। এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এমনই প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল থেকে পায়রা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্নের দুয়ার খুলে যাবে। সেতু চালু হলে আশপাশে বাণিজ্যের পরিধি বাড়বে। আর শিল্পকারখানা নির্মিত হলে স্থানীয় লোকজন সেখানে কাজ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক এবং বরিশাল সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম মাহমুদ সুমন বলেন, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতু চালু হলে খুলনা, মোংলা ও বাগেরহাট অঞ্চলের সঙ্গে পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। এতে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনে গতি আসবে। সেতু উদ্বোধনের ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মধ্যে সড়কপথে যাতায়াত সময় প্রায় এক ঘণ্টা কমে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন