বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তিস্তা ব্রহ্মপুত্রে ব্যাপক ভাঙন

সব নদীর পানি বাড়বে

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী পানি গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে। বিশেষ করে তিস্তার পানি কখনো বিপদ সীমার উপরে আবার কখনো বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভরতের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে আমন এবং নানান জাতের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা এসব নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, মন্দির, ঈদগাহ মাঠসহ আরও অনেক স্থাপনা। গাইবান্ধায় তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একারণে নদীপারের মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) জানিয়েছে, ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের সব নদ-নদীতে পানি আগামী দু’তিন দিন বাড়াবে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল এই মুহূর্তে স্থিতিশীল আছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এটি বাড়তে পারে। যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী দুই দিন এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে এ সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পরেছে কুড়িগ্রামের তিস্তা পাড়ের মানুষ। গত তিন দিনে তিস্তা নদীর ভাঙনের তোড়ে জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়ীঘর। ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। গত এক মাস যাবৎ ভাঙন শুরু হয়েছিল উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ী থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ী পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকাব্যাপি ভাঙন শুরু হয়েছে। এরমধ্যে গত তিনদিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতার ফলে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর, ৫শ’ বিঘা ফসলি জমিন, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠসহ মানুষের শেষ সম্বলটুকুও নদী গ্রাস করেছে। ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে একরাতের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০/৪০টি বাড়ী মুহুর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অনেকেই। ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছে এরাকাবাসী। বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে সুন্দরভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছি। গত পরশুদিন থেকে হঠাৎ করে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মাদ্রাসার অর্ধেক চলে গেছে। বাকীটা ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, গাইবান্ধায় গত দুই দিন থেকে তিস্তা নদী ও ব্রহ্ম নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীর কানায় কানায় পানি বিরাজ করছে। যে কোনো সময় বন্যায় রূপ নিতে পারে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি উঠে ফসল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হলেই গাইবান্ধা সদর সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একারণে নদীপারের মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো হচ্ছে সুন্দরগঞ্জের পাড়াসাদুয়া, পোড়ারচর, ফুলছড়ির উরিয়া। এলাকাবাসীরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসফাউদ দৌলা জানান, উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ১দিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করে। গতকাল তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার উজান থেকে বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে আসার সাথে সাথে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চরাঞ্চলগুলোতে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড পাড়াসাদুয়া গ্রামে নদী ভাঙ্গন তীব্রতর হয়েছে। গত এক মাসে শুধু পাড়াসাদুয়া গ্রামেই ৪ শতাধিক পরিবার তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাদুয়া ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা জানান এখন পরিবারের ভরণ-পোষণ চালানোর চিন্তায় চরের কৃষকরা দিশেহারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন