ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে জারি করা সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। গতকাল রোববার অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ রিট ফাইল করেন।
বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটের শুনানি হবে বলে জানান এই আইনজীবী। রিটে অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ক্লাসিফায়েড ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে এটি ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ।
এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় দেয়া হতো। খেলাপি ঋণ নবায়ন করার পর আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের মাস্টার সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেয়ার ৫ কার্যদিবসের মাথায় এ প্রজ্ঞাপন জারি হয়। প্রজ্ঞাপনে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো ইচ্ছাকৃত বা অভ্যাসবসত ঋণখেলাপির ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া যাবে না। কোনো খেলাপি ঋণ সাধারণত ৩ বার নবায়ন করা যাবে। তবে ঋণ আদায়ের স্বার্থে খেলাপি ঋণ ৪ দফায়ও নবায়ন করা যাবে। ৪ বারের অধিক নবায়ন করা যাবে না। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী তিনবারের বেশি নবায়নের সুযোগ নেই। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৩ বারের বেশি নবায়নের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে কোনো কোনো ঋণ ১৭ দফাও নবায়ন করা হয়েছে।
সার্কুলারে আরো বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ১০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৬ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। ১০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ ৭ বছরের জন্য এবং ৫০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অংকের ঋণ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। চলমান ও তলবি ঋণের ৫০ কোটি টাকার কম ৫ বছরের জন্য, ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ ৬ বছরের জন্য, ৩০০ কোটি টাকা ও এর বেশি ব্যাংকের ঋণ ৭ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।
কৃষি ঋণ প্রথম দফায় ৩ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে প্রতি দফায় আড়াই বছরের জন্য করা যাবে। ঋণের অংক বিবেচনায় ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ ৬ মাস হবে। তবে গ্রাহকের ক্ষতি বিবেচনায় গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ এক বছর করা যাবে।
সার্কুলারে বিভিন্ন ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের হারও উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের স্থিতি ১০০ টাকার কম হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৭ শতাংশ বা মোট ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ এর মধ্যে যেটি কম, তা ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। ১০০ কোটি টাকা বা এর বেশি থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৬ শতাংশ ও মোট বকেয়ার সাড়ে ৩ শতাংশের মধ্যে যেটি কম তা ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রজ্ঞাপন সাধারণ ঋণগৃহিতার জন্য বৈষম্যমূলক। এটি অর্থ পাচার এবং ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়ার নেতিবাচক সংস্কৃতিতে উৎসাহিত করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন