ব্যাংকের ন্যয় এবার নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন (এনবিএফআই) এর ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের হাতে ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে একটি খেলাপি ঋণ চার দফায় ২১ বছর পর্যন্ত পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারবে। তবে প্রথমবার মাত্র ৪ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণ নবায়নের সুযোগ থাকবে। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এমন নীতিমালা জারি করেছে। নতুন নীতিমালায় ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ মোট বকেয়ার দ্বিতীয় দফায় ৫ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় ৬ শতাংশ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। যা পূর্বে তিন দফায় ১০, ২০ ও ৩০ শতাংশ হারে পরিশোধ করতে হতো।
এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ক্ষেত্রে প্রথম দফায় কমপক্ষে ৭ শতাংশ, দ্বিতীয় দফায় ৮ শতাংশ এবং তৃতীয় দফায় ৯ শতাংশ পরিশোধ করেও ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। এর আগে তিন দফায় যথাক্রমে ১৫, ৩০ ও ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হতো। তবে এখন পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে বকেয়া স্থিতি বা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির অংশের মধ্যে যেটি কম হবে, সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করলেই খেলাপী এসব ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। সার্কুলারে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এসব ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করবে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তির কোনো প্রয়োজন হবে না। পুনঃতফসিলের মেয়াদ প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ৬ বছর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সর্বোচ্চ ৫ বছর। আগের নীতিমালা অনুযায়ী, তিন দফায় ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত সময় পেতেন ঋণ খেলাপীরা। তবে, গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ব্যবসা/শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে চতুর্থ দফায়ও এসব ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় দফার মতোই সুবিধা ও ডাউনপেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। যদিও আগের নীতিমালায় চতুর্থ দফায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ ছিল না। এছাড়া, এখন থেকে ঋণ পুনঃতফসিলে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ড পাবেন গ্রাহক।
তবে, পুনঃতফসিল করা ঋণের কমপক্ষে ৬টি মাসিক কিস্তি বা ২টি ত্রৈমাসিক কিস্তি আদায় না হলে পরবর্তীতে ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার ৪ দফায় পুনঃতফসিলিকরণের পরও কেউ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাকে ব্যাড লোন হিসেবে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে ঋণের অর্থ আদায়ে বাধ্যতামূলকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নতুন নীতিমালা বলা হয়েছে, শুধুমাত্র খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। তবে যে ঋণ স্ট্যান্ডার্ড মানে রয়েছে তাকে সুধুমাত্র পুনর্গঠন করা যাবে। এছাড়া পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পরিষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, ঋণের মূল পরিমাণ আদায় ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনঃতফসিল বা পুনঃর্গঠন করা ঋণের বিপরীতে কোনো অর্থ আয় খাতে নিতে পারবে না। এছাড়া জালিয়াতির ঋণ এই নীতিমালার আলোকে পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করার জন্য নির্দিষ্ট ছকে তথ্য নেবে এবং পরিদর্শনের সুবিধার্থে নথিতে সংরক্ষণ করবে। পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কস্ট অব ফান্ড কভার না করে কোনো সুদ বা মুনাফা মওকুফ করা যাবে না। অর্থাৎ, পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা অর্থের পরিমাণ যাতে আসল ও তহবিল ব্যয় থেকে কম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের নজির পাওয়া গেলে পরিদর্শন দল তা বাতিল করতে পারবে বলেও সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন