দিল্লি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতের কাছে যা যা চেয়েছে, বাংলাদেশকে ভারত সবই দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে অভিন্ন সমস্যাগুলোরও সমাধান হবে। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিনি আরো বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন এমন কোনো কথা নেই। নরেন্দ্র মোদি এসেছেন, তখন কি (তাদের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তো মানুষ। একজন মানুষ অসুস্থ হতে পারেন। তার বাসা থেকে শুনেছি, তিনি কিছুটা অসুস্থ। এটা হতেই পারে। কিছুদিন আগে কথাবার্তা বলায় তার (মোমেন) হয়তো একটা সিøপ হয়েছে, এজন্য তার মন্ত্রিত্ব চলে যাবে কি না- এ এখতিয়ার তো আমার নেই। এ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর, তিনি চাইলে বাদ দিতে পারেন।
‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, বরং তিনি দিয়ে এসেছেন’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সরকারের সময়ে খালেদা জিয়া তো বারবার ভারত যাননি, একবার সফরে গিয়েও আমাদের আসল কথা, গঙ্গার পানি চুক্তির কথা বলতে পারেননি। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো ভুলেই গেছিলাম’। যারা এ ধরনের সেনসেটিভ ইস্যুর কথা ভুলে যায় তাদের মুখে এসব কথা মানায় না। শেখ হাসিনা কিছু ভোলেন না। তিস্তা এবার হয়নি, কুশিয়ারা হয়েছে। সাতটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। আমরা খালি হাতে ফিরে আসিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি তো একটাতেই খুশি। কেন? বর্তমান সংকটে আমরা কী দেখি, আমাদের জনগণকে বাঁচাতে হবে। বর্তমান সংকট মোকাবিলার যা যা দরকার, যা যা আমরা চেয়েছি ভারত সবই দিয়েছে। কুশিয়ারা হয়েছে তিস্তাও হবে। ভারত অস্বীকার করেননি আর শেখ হাসিনাও ভুলে যাননি তিস্তার কথা বলতে। আমরা ভুলে যাইনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের কিছুটা স্বার্থের ব্যাপার আছে, সেটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতি হচ্ছে। আমি তো আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সেটাও হবে। আপাতত যা পেয়েছি আমি মনে করি তা যথেষ্ট।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট করেছে। বিএনপির তো পুরোপুরি না পাওয়ার হতাশা। আমাদের না পাওয়ার হতাশা নেই। দু’দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করেছি। ২১ বছর আপনারা (বিএনপি) দেয়াল তুলেছেন। দেয়াল তুলেছেন ভারতের সঙ্গে। সম্পর্কে সংশয় আর অবিশ্বাসের দেয়াল। সেই দেয়াল আমরা ভেঙে দিয়েছে। সেজন্য সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে যেটা পৃথিবীর কোথাও হয়নি। না পাওয়ার হতাশা আপনাদের (মির্জা ফখরুল) মধ্যে আছে কারণ আপনার ভুলেই যান আসল কথা বলতে। আমরা বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রীর কোনো বয়স নেই। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন ৮০ বছর পার হওয়া পর্যন্ত। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতির কোনো সময়সীমা থাকা উচিত না, যতক্ষণ তিনি সক্ষম, থাকবেন। তিনি যদি মনে করেন আমি অবসরে যেতে চাই, তিনি ছেড়ে দিতে পারেন। তার অভিমত প্রকাশের পর দল যদি মনে করে তাকে অবসর দিতে পারে। তাকে সম্মানজনক উপদেষ্টা পদ দেওয়া যেতে পারে। সারা জীবন রাজনীতি করে কেউ শেষ বয়সে যদি রাজনীতি করতে না পারেন তাহলে তো মৃত্যুর আগেই মরে গেল। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই কার্যকর হবে।
আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের এই মন্ত্রিসভা কিছুটা দুর্বল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তারা দুর্বল নয়। ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। কিছুটা দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু মন্ত্রিসভা দুর্বল নয়। কোনো কাজ কিন্তু ঠেকে থাকছে না। মন্ত্রিসভায় রদবদল এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আপনারা গণমাধ্যমে লেখালেখি করছেন, সেটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আছে। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনিই সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আগামী নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইসির সঙ্গে সংলাপে আমরা ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছি। গত নির্বাচনে চেয়েছি, এবারও আমরা বলেছি ৩০০ আসনে ইভিএম চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই ঠিক।
সামনে জাতীয় নির্বাচন কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিতে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি চাই। রাজনীতিতে আন্দোলন আছে, থাকবে। আমরা জনগণের সম্পৃক্ততা চাই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এক কথা, সহিংস আন্দোলন তো জনস্বার্থে প্রতিরোধ করতে হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এখানে সাস্প্রদায়িকতার উপাদান আছে, সেটিও অতিক্রম করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। যথাযথ সময়ে সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্ব পালনও করছি। প্রধানমন্ত্রীর কতগুলো মেগা প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, রাজধানীতে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এ বছরের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হবে। দ্বিতীয় ফেস মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের ডিসেম্বরের আগেই উদ্বোধন হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের দুইটি টিউবের একটি এ বছরের নভেম্বরের শুরুতে উদ্বোধন হবে। দ্বিতীয়টি নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে উদ্বোধন হবে। এ মুহূর্তে ২৭টি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন