মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল বাজার হবে বাংলাদেশ

ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ একটি বিশাল বাজার হয়ে উঠবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, এখানে (বাংলাদেশে) বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা, যখন তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, তখন শুধু বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকানো উচিত নয়। তাদের উচিত এটিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাথে একত্রিত করা। এর কারণ হলো-আমরা এখন যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক, রেল এবং নৌপথে কানেক্টিভিটির বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশ ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বিশাল বাজার হয়ে উঠবে।

গতকাল বুধবার ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান। এসময় ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, চীন, শরণার্থী এবং দেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ ও ভারত শিগগিরই কম্প্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) বা ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এটি মূলত একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি। ২০২১-২২ সালে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সমৃদ্ধ সেই বাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নেবে সিইপিএ।

সালমান রহমান ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, সিইপিএ শেষ করার কোনো সময়সীমা নেই, তবে আমরা আশাকরি এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে যাবে। নীতিগতভাবে, আমরা সিইপিএ করতে রাজি হয়েছি। যথাযথ আলোচনা শুরু করার আগে আমাদের বিষয়টি মূল্যায়ন বা তদন্ত করে দেখতে হবে এবং অনেক কাজ করতে হবে। ঠিক আছে, আমরা যে সময়সীমা চাই তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত ভালো, তবে অনেক কাজ করার আছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের কথাও বলেছেন। সালমান রহমান বলেন, এটি কেবল শুরু। আমাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন।

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ এবং সম্ভাব্য ‘ঋণের ফাঁদ’ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সালমান রহমান বলেন, বৈদেশিক ঋণের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর এটিই বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পগুলোর মধ্যে একটি।

তার ভাষায়, একইভাবে, বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক ঋণও ন্যূনতম। আমাদের সব ঋণই দ্বিপাক্ষিক ঋণ, যা রেয়াতি (স্বাভাবিকের তুলনায় ছাড়কৃত) হারে নেওয়া। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল-ওই দেশটির সরকার বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছিল। আমরা তা করিনি। এমনকি আমাদের কোনো সার্বভৌম বন্ডও নেই।

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা বলতে গিয়ে সালমান রহমান বলেন, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর (এ বিষয়ে) উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলছেন, চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক হলো-তারা আমাদের কিছু প্রকল্পের জন্য রেয়াতি ঋণ দিয়েছে এবং আমরা সেগুলোকে প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করেছি। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে বিশ্বাস করে পদ্মাসেতু হয়তো চীনা সরকারের একটি প্রকল্প। কিন্তু এটি সত্য নয়।

এটি (পদ্মাসেতু) সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের অর্থায়নে এবং আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে একটি চীনা কোম্পানির মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। এটি বাণিজ্যিক বিষয়। তার মানে এই নয় যে, আমরা এই ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে কিছু অবকাঠামো প্রকল্প রয়েছে যেখানে চীন অর্থায়ন করেছে।

তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বিরোধ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলেই এই বিরোধের সমাধান হবে। আমরা ইতোমধ্যেই অনেক দফা আলোচনা করেছি এবং আমি মনে করি, ভারতের পক্ষ থেকেও (বিরোধ সমাধানের) সেই উপলব্ধি রয়েছে। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমেই এই বিরোধের অবসান করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

এছাড়া ভারতের রাজনীতিতে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তাপ চোখে পড়ার মতো। তাদের দাবি, এসব অভিবাসীদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। যদিও ঠিক কত সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে অবৈধভাবে ঢুকেছেন তা নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তারা। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসীরা অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু বলে মন্তব্য করেছেন সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীরা অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু এবং একবার তাদের (অবৈধ অভিবাসীদের) অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে তারা দেশ ছেড়ে যাবে না। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে অবৈধ অভিবাসীরা বাংলাদেশে ফিরে আসবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন