দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই বিতর্কিত মহাপরিচালক (ডিজি)কে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন, অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এবং একেএম সোহেল। এদের মধ্যে সাঈদ মাহবুব খান প্রায় ৫ বছর ধরে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) পদে কর্মরত রয়েছেন। যুগ্ম-সচিব একেএম সোহেল ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত রয়েছেন দুদক মহাপরিচালক (আইসিটি ও প্রশিক্ষণ) হিসেবে। জনপ্রশাসনের এক প্রজ্ঞাপনের তথ্য মতে, একে এম সোহেলকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে যুগ্ম-সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খানকে বদলি করা হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। ৮ সেপ্টেম্বর একে এম সোহেলকে বদলি করা হয়। সাঈদ মাহবুব খানকে বদলি করা হয় ২৯ আগস্ট। প্রশাসন ক্যাডারের এ দুই কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের দু’টি মহাপরিচালকের পদ দীর্ঘদিন আকড়ে ধরে রাখেন। তাদের বদলির আদেশের মধ্য দিয়ে সংস্থাটিতে দুটি মহাপরিচালকের পদ শূন্য হলো। বর্তমানে দুদকে ৩টি মহাপরিচালকের পদ শূণ্য রয়েছে।
একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালনকালে এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠে ক্ষমতার অপব্যবহার, বৃহৎ দুর্নীতির দায় থেকে প্রভাবশালীদের দায়মুক্তি প্রদান, স্বজন প্রীতিসহ অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। কমিশনের বিগত চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের ‘পছন্দের লোক’ হিসেবে পরিচিত দুই কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিকে নানাভাবে বিতর্কিত করেন। এর মধ্যে বিশেষ অনুসন্ধান Ñতদন্তের দায়িত্বে থাকা মহা-পরিচালক সাঈদ মাহবুব খানের বিরুদ্ধে রয়েছে কমিশনকে ‘মিস গাইড’ করা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দায়মুক্তি প্রদানের অভিযোগ। দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা, গণপূর্তের প্রকৌশলী, স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া ডন, রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং প্রশাসন ক্যাডারকে দায়মুক্তি প্রদানেও ভূমিকা রাখেন। পছন্দসই কর্মকর্তাদের নামে গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের ফাইল এনডোর্স করা, পাবলিক মানি আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত না করে, আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ ফেরত দেয়ার মাধ্যমেও অনেককে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। এমনকি ইকবাল মাহমুদের ব্যক্তিগত জিগাংসা চরিতার্থ করতে বহু নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে শক্ত ভূমিকা নেন তিনি। সাঈদ মাহবুব খান মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজেও বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন কি-না Ñসেটিও এখন অনুসন্ধানের দাবি রাখে বলে মনে করেন দুদকের একাধিক কর্মকর্তা।
অন্যদিকে একে এম সোহেলের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)র বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ক্ষমতা অপব্যবহার ব্যক্তিগত পারিবারিক কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার, নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সুপারিশ করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে একে এম সোহেলের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রভাবশালী অনেক দুর্নীতিবাজকে কোনো ধরণের অসুন্ধান ছাড়াই বাছাই পর্যায় থেকে দায়মুক্তি দিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। অকাট্য প্রমাণাদিসহ দুর্নীতির অন্তত, ৯৫ ভাগ অভিযোগ অনুসন্ধানে না পাঠিয়ে সরাসরি দায়মুক্তি প্রদান কিংবা অভিযোগ গায়েব করে দেয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে একে এম সোহেলের বিরুদ্ধে। দুদক আইন ও অনুসন্ধান ম্যানুয়াল সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় তফসিল বহির্ভুত বহু অভিযোগ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেন তিনি। সর্বশেষ গত ২৩ জুন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির দাখিলকৃত কথিত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন একে এম সোহেল। তার অপরিণামদর্শী এই সিদ্ধান্ত থেকে পরে অবশ্য কমিশন সরে আসে। এ ঘটনায় দুদকক অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। এসব কারণে বিতর্কিত দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশে প্রতিষ্ঠানটিতে হৃত কর্মপরিবেশ ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
অতিরিক্ত সচিব হয়েও যুগ্ম-সচিবের পদমর্যাদার ‘মহাপরিচালক’পদে থাকা সাঈদ মাহবুব খানের বদলির আদেশ হলেও একই পদে তিনি আরও কিছুদিন থাকার জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তার এই তৎপরতায় দুদক সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন-মহাপরিচালকের এই পদে কী তাহলে মধু আছে ? প্রায় ৫ বছর একই পদে থেকেও কেন তিনি এখানকার মোহ ছাড়তে পারছেন না?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন