নিরাপদ খাদ্য দূষণ ও হাইব্রিডের কারনে মরিচিকার বিষয় হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফল-শাকসবজিতে ফরমালিন থাকবেই। বিক্রেতারা জোর গলায় বলেন, তারা ফরমালিন মোশানো ফল-শাকসবজি বিক্রি করেন না। ফরমালিন মেশানো খাবার খেয়ে ক্যানসার ও লিভার সিরোসিসসহ অন্যান্য প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। অথচ এ থেকে অতি সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
দেশের কীটত্ত¡বিদরা ল্যাবরেটরীতেই দীর্ঘ গবেষণায় ফরমালিন থেকে মুক্তির সহজ সমাধান বের করেছেন। গাজীপুরের জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করে তারা দেখতে পেয়েছেন লবন পানি অথবা পানি ও ভিনেগার মেশানো শাকসবজি ও ফল মাত্র ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ দূষণমুক্ত হয়ে যায়।
বিশিষ্ট কীটতত্ববিদও কন্দাল ফসল গবেষণা ইনিস্টিটিউট বগুড়ার ইনচার্জ সিনিয়র কৃষি বিজ্ঞানী জুলফিকার হায়দার প্রধান ইনকিলাবকে বলেন, পানিতে এক দেড় ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ফল ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়। এতে ফরমালিনের মতো কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ অনেকেটাই দূষণমুক্ত হয়।
জয়দেবেপুরের কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ১ লিটার পানিতে ২ চা চামচ লবন অথবা ভিনেগার মিশিয়ে ফল-শাকসবজি ভিজিয়ে রাখা হয় তাহলে সেটা ৬০ থেকে ৮০ ভাগ দূষণমুক্ত এবং নিরাপদ হয়ে যাবে। জুলফিকার হায়দার জানান, এখন পর্যন্ত লবন যেহেতু ভিনেগারের তুলনায় সস্তা ও সহজলভ্য সেহেতু লবনের ব্যবহারটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কীটতত্ত¡বিদ আরও বলেন, পেস্টিসাইড ফল ও ফসলের ভেতরে চলে যায় লবন পানির দ্রবন সেটা রিমুভ করতে পারে না। সেহেতু ফসলে পেস্টিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগের পরে তার যে নির্দিষ্ট মেয়াদ (কোন ক্ষেত্রে ৭ আবার কোন ক্ষেত্রে ১০ দিনের) রয়েছে সেটা পার হওয়ার পর যদি ফল ও ফসল তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় তাহলে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য পুরোপরি নিরাপদ থাকেব। জনস্বাস্থ্যের জন্য উৎপাদক চাষি, বিক্রেতা, ফল আমদানিকারক, পাইকারি আড়তদার, ফল বিক্রেতা সকলের জন্য নৈতিকতা একটি বিরাট ব্যাপার। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা।
জনসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে বিজ্ঞানী মন্তব্য করেন। তার কথা, দেশ ও দেশের জনগনের স্বার্থে মিডিয়া হিসেবে ইনকিলাব বরাবরই বিরাট ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক্ষেত্রেও ইনকিলাব পথিকৃতের ভূমিকায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে পুষ্টির চাহিদার ঘাটতির বিষয়টি প্রকট নয়। তবে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি রীতিমত সামাজিক হুমকি। পেস্টিসাইড ও ফরমালিনযুক্ত খাবার খেয়ে দেশে এখন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এটি একেবারেই অনাকাঙ্খিত।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, লবন পানির দ্রবনে ফল ও সবজির যাবতীয় কেমিকেল দূষণ মুক্তির বিষয়টি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবশ্যই একটি মাইল ফলক। দেশের কীটতত্ত¡বিদরা এ জন্য অভিনন্দন পাওয়ার দাবিদার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন