রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার ফুটপাথই ব্যবসায়ীদের দখলে। নগরবাসীর হাঁটার পথ দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। এসব দোকানের দখলদারিত্বের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা ও অসাধু কিছু প্রশাসনের লোকজন। তাদের ফুটপাথ বাণিজ্যের কারণে হাঁটার রাস্তায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোন কোন এলাকায় ফুটপাথগুলোতে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গুলিস্তান এলাকার কয়েকটি স্থানে ফুটপাথের উপরে চাল দিয়ে স্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। এতে করে নগরবাসীকে চলতে হচ্ছে মূলসড়কের উপর দিয়ে। এসব এলাকার ফুটপাথের দোকান সরানোর জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযান চলার সময় সব দোকান উঠে গেলেও অভিযান শেষে আবার আগের মতো বসে পরে দোকানগুলো। এতে স্থায়ী সমাধান করা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন নগরবাসী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গতকাল রোববার ফুটপাথ থেকে হকার সরিয়ে হাঁটার পথ দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে। সিটি করপোরেশনের অভিযানের খবরে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান হকাররা। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে বা দায়িত্ব পেয়ে ইনফর্মার বনে যান। ম্যাজিস্ট্রেটকে আসতে দেখলেই তারা সিগনাল দিয়ে হকারদের রক্ষার কাজ করতে থাকেন। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট গুলিস্তানের এক গলি দিয়ে ঢুকলে খবর পেয়ে অন্য গলি দিয়ে কাঠের খাট, বাকস, কাঠ ও প্লাস্টিকের টুল-মোড়া ইত্যাদিসহ যার যার বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে দৌড়ে পালান হকাররা। এ যেন ম্যাজিস্ট্রেট-হকার লুকোচুরি খেলা। তাড়াহুড়ো করেও ঠিক সময়ে জিনিসপত্র বস্তায় ভরতে বা সরিয়ে ফেলতে না পেরে অনেকেই জরিমানায় পড়েছেন।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) হতে বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান। সকাল ১১টা হতে শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় ৯ ব্যক্তিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯২ ধারার ৭ ও ৮ নম্বর উপধারায় এই জরিমানা আদায় করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর হতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দিয়ে যান চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। তাই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে মেয়রের নির্দেশনায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এবং বঙ্গভবন ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারগামী ও ফ্লাইওভার হতে গুলিস্তান চত্ত্বর এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই রেড জোন হতে সকল প্রকার হকার এবং রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদে আজ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত ৩ দিন এখানে টানা মাইকিং করা হয়েছে। আমরা এখানে কোনও হকার বসতে এবং কাউকে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবো না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানকালে করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনামুল হক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন উপস্থিত ছিলেন।
রাস্তা ও পায়ে হাঁটা পথসমূহকে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক দফতর আদেশে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঢাদসিক প্রণীত মহাপরিকল্পনার সাথে সমন্বয় রেখে রাস্তা ও হাঁটার পথ যানবাহন ও জন চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন