জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে মন্ত্রিসভায় রদবদল গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে বদবদল হলে একধিক মন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। কয়েকজনের মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের হতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ অন্তভূক্ত হতে পারে বলেও জানা গেছে। সুত্রের দাবি ইতোমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে ঠিক তখনেই মন্ত্রীদের একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যের কারণে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। দেশের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪৪ টাকা বৃদ্ধি করার কারণে যখন জনমনে অসন্তোষ, বিরোধী দলের আন্দোলন, ঠিক তখনই একজন মন্ত্রীর বললেন ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের ‘অতিরঞ্জিত ও বিতর্কিত’ কথাবার্তা ক্ষিপ্ত এখন খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। বেহেশত থেকে ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করা প্রয়োজন করতে হবে’ অতিবচনের কারণেই দেশে এখন সমালোচিত ব্যক্তি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। ১৫ আগষ্টের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মোনাজাতে বক্তব্য নিয়েও অসন্তোষের সৃস্টি হয়।
জানা গেছে, টিকা কার্যক্রমে সাফল্য দেখালেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী আসছে নতুন মুখ। এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে অবস্থান করবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রানি এলিজাবেথের বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে অবস্থান করবেন। লন্ডনে যাওয়ার আগেও মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে অসুস্থ হওয়ার আগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিসভার রদবদল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্ত্রিসভার রদবদল রুটিন বিষয়, যা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। দলে পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভার সদস্য তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না জানতে চাইলে ওইসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটাও প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে, দ্যাট ইজ ফাইনাল। আমরা সবাই তার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তিনি যদি আমাকে বলেন ছেড়ে দাও, আমি ছেড়ে দেব। এটা কোনো বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রীরা দায়বদ্ধ। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের পারফরমেন্স তার হাতে আছে, বিচার বিশ্লেষণ তিনিই করছেন।
জানা গেছে, সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায় মনে করছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কারও কারও ব্যর্থতা, দক্ষতা ও দুর্নীতি সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের যাওয়ার আগেই মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়ার কথা থাকলে সেটি চলতি সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহে পরিবর্তন আসছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সচিবালয়ে। শুধু সচিবালয় পাড়ায় নয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের একাধিক মন্ত্রীরাও এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও রদবদলের সত্যতা পাওয়া গেছে। যেসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার কথা আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- শিল্প, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, খাদ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, যুব ও ক্রীড়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের ব্যর্থতার দায় নিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই। ওই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের ওপর কিছুটা বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী।
সে কারণে বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, খাদ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের পরিবর্তন হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন চলছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে কোন মন্ত্রণালয়ে যে কোন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পাচ্ছেন ডা: প্রাণগোপল দত্ত। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন ছাড়া আগামী দ্বাদশ নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন ছাড়াও বাদ পড়তে পারেন হেভিওয়েট কেউ কেউ। পাশাপাশি যুক্ত হতে পারে নতুন মুখ।
৪৮ সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯জন ও উপমন্ত্রী ৩ জন রয়েছেন। বর্তমানে ৮টি মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী নেই। সেগুলো হচ্ছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আছে জনপ্রশাসন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন মন্ত্রিসভায় যারা নতুন যোগ হবেন অথবা যারা পদোন্নতি পাবেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতা ইনকিলাবকে বলেন, মন্ত্রীসভার রদবদলের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। কাকে নিয়ে বা কাকে বাদ দিয়ে তিনি মন্ত্রীসভা চালাবেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে থেকেই মন্ত্রীসভায় রদবদলের বিষয়টি আছে।
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে কাউকে বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার গুঞ্জন রয়েছে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়ে কাউকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত যেসব মন্ত্রণালয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে সেখানে রদবদল আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন