সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার রায় (৪৩)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সপরিবারের ভারতে পালিয়ে যান। গত রোববার রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা থেকে চন্দন কুমার রায়কে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ পাওয়া পলাতক আসামি ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ১৫-১৬ দিন পর চন্দন তার আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় ভারতে চলে যান। গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট বোন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তখন ঘটনাটি দেশব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, চন্দন ভারতে পালিয়ে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভুয়া নাগরিকত্ব ও আধার কার্ড করে সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। ভারতে অবস্থান করেই সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন চন্দন। মাদক সংক্রান্ত কাজে তিনি কিছুদিন ধরে সাতক্ষীরায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন বলে জানতে পারে র্যাব। এই তথ্যের ভিত্তিতে ভোমরায় অভিযান চালিয়ে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। এরপর মামলার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ ৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেয়া হয় অভিযোপত্র। ৬ আসামি গ্রেফতার হলেও প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায় পালিয়ে যান। পরে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর চন্দনসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। গ্রেফতারকৃত চন্দনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার চন্দন কুমার রায় সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে লিটনের সমর্থিত লোকজনের সঙ্গে তার মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। চন্দন জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানান, লিটনের প্ররোচনায় একটি মামলার আসামি দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করানো হয়। এ মামলায় ১৯ দিন কারাভোগ করেন চন্দন। এরপর তার বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে লিটনের সহযোগিতা চেয়েছিলেন চন্দন। কিন্তু লিটন তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হন চন্দন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরবর্তীতে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালে চন্দনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন লিটন। সাবেক এমপি আবদুল কাদের খানের পিএস শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয় হয় চন্দনের। সেই সূত্র ধরে আবদুল কাদের খানের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয় তার। হত্যাকাণ্ডের আগে মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও গাড়িচালক হান্নান অস্ত্র চালানো ও হত্যার পর দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবরে এমপি লিটনের ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার তথ্য দেন চন্দন। তারা মাঝপথে হত্যার পরিকল্পনা নিলেও লিটন গাবতলী এসে ফিরে যাওয়ায় সেটি ভেস্তে যায়। একই বছরের ডিসেম্বরে লিটনকে তার সুন্দরগঞ্জের বাড়িতেই হত্যার পরিকল্পনা হয়। ওই দিন বিকেলে চন্দন জানান, এমপি লিটন তার নিজ বাড়িতে একা অবস্থান করছেন। এ খবরের ভিত্তিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকারী শাহীন, রানা ও মেহেদী মোটরসাইকেলে করে লিটনের বাড়িতে যান এবং গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন