এক শিশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, তদন্ত এবং সাক্ষ্য দেয়ায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক বিচারক। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা। সাধারণত মিথ্যা মামলা দায়ের করায় বাদীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা করার ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবীরা।
ক্ষতি করার উদ্দেশে জেনেশুনে মিথ্যা মামলা দায়ের, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৫(১) বি এবং ৪৭৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। চট্টগ্রামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পাশাপাশি শিশু আদালত হিসাবে বিচারকার্য করে থাকেন। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- নগরীর পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুধীর পাল। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন শিল্প পুলিশে কর্মরত।
মামলার আরজির বরাত দিয়ে আইনজীবীরা জানান, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শুল্কফাঁকি দিয়ে দুটি স্বর্ণের বার চোরাচালানের অভিযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে এক শিশুকে আটক করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। পরদিন ওই শিশুর বিরুদ্ধে এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই শিশুকে আসামি করে একই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে দোষীপত্র জমা দেন এসআই সুধীর পাল। পরে দুই এসআই শিশুকে দায়ী করে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওই শিশুকে বেকসুর খালাস দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে শিশুটির আত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্কবিধান না মেনে বাহরাইন থেকে দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বিমানবন্দরের ব্যাগেজ পরিদর্শক ওই ব্যক্তিকে আটক করে। পরবর্তী সময়ে শুল্ক পরিশোধ করে স্বর্ণের বার দুটি নিজ হেফাজতে নিয়ে ওই শিশুকে দেন তিনি। এ খবর পেয়ে পতেঙ্গা থানা পুলিশ স্বর্ণসহ শিশুটিকে পার্ক থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ সময় শিশুটির পরিবার স্বর্ণ বারের বৈধ কাগজপত্র দেখালেও পুলিশ শিশুটিকে থানায় আটকে রাখে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে একটি স্বর্ণ বার দাবি করে। এতে রাজি না হলে পুলিশ ওই শিশুটির বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলায় শিশুটি সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়ার পরও এক মাস ছয় দিন জেলহাজতে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন