নাগরিক সেবা বৃদ্ধির জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু মহানগরবাসীর দুঃখ ঘোচেনি। বরং যতই দিন যাচ্ছে নাগরিক জীবন ততই দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সঙ্কট, পানি সঙ্কট, গ্যাস সঙ্কট, রাস্তায় বের হলে যানজট, সামান্য বৃষ্টি হলে মহানগরের বেশির ভাগ সড়ক পানি নীচে তলিয়ে যায়। গতকাল রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে ঘর থেকে যারা বের হয়েছেন তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। কাকভেজা হয়ে অনেকেই অফিসে গেছেন। কেউ কেউ যানবাহনের অভাবে গন্তব্যে পৌঁছিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
সাগরে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গত কয়েকদিনে ধরেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তার ব্যতিক্রম হয়নি, ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা ও এর আশাপাশে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আর এরফলে সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে রাজধানীতে কোথাও হচ্ছে টানা বৃষ্টি, কোথাও থেমে থেমে বৃষ্টি। এতে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা। এর ওপর রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। মহানগরীর কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায় যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। তারা জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ এবং পানিবদ্ধতার কারণে পুরো মহানগরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বিমানবন্দর সড়ক তথা তেজগাঁও থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, মালিবাগ থেকে খিলক্ষেত, মিরপুর-১০ থেকে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যানজটের মাত্রা বেশি। এসব সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
রাজধানীর যানজটের তীব্রতা গুগল ম্যাপে ঢুঁ দিলেই স্পষ্ট দেখা যায়। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালেও। অনেকেই সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার যানজটের চিত্র তুলে ধরে পোস্ট দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন বিমানবন্দর সড়কের যাত্রীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেটের আশেপাশের এলাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এ নিয়ে একটি ‘ট্রাফিক বুলেটিন’ প্রকাশ করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। ফেসবুকে পোস্ট করা বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মিলগেইট এলাকায় ফ্লাইওভারের পিয়ার ক্যাপ-এর জন্য খুড়ে রাখা উন্মুক্ত গর্ত, গর্তের চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাস্তা সংকুচিত হওয়া এবং খানাখন্দগুলো দীর্ঘমেয়াদে মেরামত না করায় উভয়মুখী এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে। অবকাঠামোগত এ দুর্বলতার কারণে মহাসড়কটির এ অংশে উভয়মুখী রাস্তায় যান চলাচল নিরবিচ্ছিন্ন রাখার প্রয়াসে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ট্রাফিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়েছে, ‘জিএমপি-তে অন্যান্য এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হলেও ডিএমপিসহ টঙ্গী-মিলগেইট এলাকায় বিআরটি প্রজেক্টের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এর সঙ্গে গত রাত থেকে ভারী বর্ষণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।’
ভোর থেকে রাজধানীজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি এ ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ত্রাহী অবস্থা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সড়কে চলাচলকারীদের। অফিসগামী যাত্রীরা বলছেন, নতুন অফিস সূচি চালু হওয়ার পর থেকে সকালে অফিস এবং স্কুলের সময় একসঙ্গে পড়ায় সেই সময় যানজটের মাত্রা এমনি তীব্র থাকে। তারপরও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের গতি একেবারে কমে এসেছে।
তবে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে রাস্তার দুইপাশে যানবাহনের বিপরীত ধর্মী চিত্র দেখা গেছে। বেলা ১২টার পরে গিয়ে দেখা যায়, এ সড়কের নতুন বাজার থেকে মগবাজার উড়াল সেতু পর্যন্ত রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। আবার কুড়িল উড়াল সেতু থেকে গুলিস্তান যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে।
সকাল ১০টায় মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন মো. ইকবাল হোসেন। গন্তব্য গুলিস্তান। এই পথটুকু যেতে তার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছে। মো. ইকবাল হোসেন বলেন, মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে হেঁটে গেলেও গুলিস্তান যেতে এত সময় লাগতো না। বৃষ্টির কারণে বাসেই বসে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় বাসে বসে থেকে অনেক যাত্রীই ভোগান্তিতে পড়েছেন। তিনি জানান, এই পথের মধ্যে মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় যানজট বেশি ছিল। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগককেও অসহায় দেখা গেছে।
এদিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর সামনে থেকে সদরঘাটগামী আজমিরী পরিবহনে ওঠেন সোহরাব হোসেন। দুপুর দেড়টায় নামেন মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে। তিনি জানান, এই পথে আসতে তার সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। অথচ রাস্তা ফাঁকা থাকলে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটেই মহাখালী পৌঁছানো যায়। এমন ভোগান্তির কথা জানলে আজ বাসা থেকে বের হতাম না।
বিমানবন্দর সড়কে যানজটের চিত্র তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্টাটাস দেন আহমেদ মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যক্তি। তিনি লেখেন, মগবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার যানজট। ওদিকে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। বিকল্প পথ ধরতে গিয়ে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে তেজগাঁও, গুলশান, বনানীসহ আশপাশের এলাকায়। গুগল ম্যাপ লালে লাল। ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপ থেকে জানা যায়, ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে সব গাড়ি বন্ধ করে রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের কাছে। আমিও তিন ঘণ্টা ধরে পথেই বসে আছি। কিছু বলবো না। অসহ্য।
উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার নাবিত কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরে মুন্নু সিরামিকের সামনের রাস্তা ভাঙা থাকায় সেখানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমেছে। ফলে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। তবে উত্তরা থেকে বনানীমুখী রাস্তা ফাঁকা।
এদিকে শনির আখড়া থেকে কাজলা হয়ে যাত্রাবাড়ি ৩ মিনিটের পথ পৌঁছাতে এক ঘণ্টা লেগেছে। এ রুটে রায়ের বাগ থেকে মতিঝিল এসেছেন এমন একাধিক যাত্রী জানান, তীব্র যানজটের কারণে এক ঘন্টা পর অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে। নিউ মার্কেট, আমিজপুর এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন