ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর এমপি পদে বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের বিভক্তি রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার(০৬ ডিসেম্বর) সিনিয়র বিচারপতি বাংলাদেশ সংবিধান ৬৬ (২) মোতাবেক, নৈতিক স্খলনজনিত ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে নিজাম হাজারীর এমপি পদ অবৈধ ঘোষণা করেন অপর দিকে জুনিয়র বিচারপতি বিভক্ত রায় দিয়েছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান’। পরে ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ৩ আগস্ট এ রুলের শুনানি শেষে ১৭ আগস্ট সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর পদ থাকবে কি-না সে বিষয়ে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতের একটি নথি না আসায় রায়ের দিন পিছিয়ে ২৩ আগস্ট ধার্য করা হয়। অস্ত্র মামলায় বিচার শুরুর আগে নিজাম হাজারী কতদিন জেল খেটেছেন সে বিষয়ে নথি না পাওয়ায় সেদিন রায় দেননি আদালত। ২৩ আগস্টের আগেই সেটি দাখিল করবেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার এবং এর ভিত্তিতে ওইদিন রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২৩ আগস্ট ওই নথিটি দাখিলের পর সেটি নিয়ে শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন পুনঃনিধারণ করেন হাইকোর্ট। গত ৩০ আগস্ট রায় দিতে শুরু করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এর মধ্যে কারাগারে রক্তদান করায় নিজাম উদ্দিন হাজারী কতদিন সাজা রেয়াত পেয়েছিলেন, সে প্রশ্ন ওঠায় আদালত রায় স্থগিত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত ০৩ নভেম্বর ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ১৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ২২ নভেম্বর পঞ্চমবারের মতো রায়ের দিন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২৮ নভেম্বরও রায় না দিয়ে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় ১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়ের করা মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। নিজাম হাজারী ঠিক কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সে বিষয়ে আদালতের নথিতে দুই রকম তথ্য থাকায় এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
০১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আদালতে নিজাম হাজারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্যরঞ্জন দত্ত। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী।
শুনানি শেষে ০৬ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলন জনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন