শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি কাল

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হতে যাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং সেন্টারে উভয় দেশের মন্ত্রীপর্যায়ে জি টু জি প্লাস সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। জি টু জি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে সফররত হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জিম স্বাক্ষর করবেন। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে মর্যাদা লাভ করবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সির নামের তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রেরণ করবে। সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচিত করবে। জি টু জি প্লাস চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে চলতি মাসের শেষ দিক থেকেই মালয়েশিয়ায় স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ শুরু হবে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যাতে কোনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে না যায় এবং সকল রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পায় তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য বায়রার সভাপতি মোঃ আবুল বাসার গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রবাসী সচিব বেগম শামছুননাহারের কাছে লিখিত আবেদন পেশ করেছেন। বায়রার সভাপতি মোঃ আবুল বাসার গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার গন্ধ পাচ্ছি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিলে যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে বলেও বায়রা সভাপতি আবুল বাসার উল্লেখ করেন। বায়রার সভাপতি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষার জন্য কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সচেতন সকল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। আগামীকাল জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় উভয় দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কোনো দাওয়াত পাননি বলেও বায়রা সভাপতি উল্লেখ করেন।
মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জিমের নেতৃত্বে ৭ সদস্য প্রতিনিধি দল আজ বুধবার বাংলাদেশে পৌছবে। মালয়েশিয়ার সফররত প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন, মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রির ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল (পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল) দাতো মোহাম্মদ সাহার দারুসমান, ডিপার্টমেন্ট অব লেবার-এর ডাইরেক্টর জেনারেল দাতো মোহাম্মদ জেফরি বিন জোয়াকিম, লেবার পলিসি ডিভিশনের আন্ডার সেক্রেটারী মিস বেটি হাসান, হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রির স্পেশাল অফিসার রবার্ট দাপান, লেবার অব পলিসি ডিভিশনের এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি সতীশ শ্রী নিবাসন, ফরেন ওয়ার্কাস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের আন্ডার সেক্রেটারী মোহাম্মদ জামরি বিন মাত জাইন ও বাংলাদেশস্থ মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার নূর আশিকান বিনতি মোহাম্মদ তিয়াব।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্ত জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে গত ২১ জানুয়ারী পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৯২ জন কর্মী জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে সকল অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের ঘোষণা দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে নথিবদ্ধ করেই এবারের নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। অবৈধ কর্মীদের বৈধতা পাওয়ার সুযোগ ও মালয়েশিয়ার কর্মী চাহিদা মেটানোর কথা মাথায় রেখেই এ ব্যবস্থা নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে এ সুযোগের আওতাধীনদের বিশেষ কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যারা অযোগ্য বিবেচিত হবেন, তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। মালয়েশিয়া সরকারের অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের সিদ্ধান্তে দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীরাও বৈধ হবার সুযোগ পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ ভেস্ট মার্কেটিং এস ডি এন-বিএইচডি’ (৭৬৯২২৪-এ)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধকরণের সুযোগ দেয়ায় মালয়েশিয়া সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রুহুল আমিন মালয়েশিয়ার কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সকল রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণের সুযোগ পান তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, অবৈধ কর্মীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে সে দেশে অবস্থানরত সকল অবৈধ শ্রমিকদের আদমশুমারি করা হবে, যা পরবর্তীতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। প্রশাসন থেকে জানানো হয়, সকল প্রকার হয়রানি ও জালিয়াতি ঠেকাতে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন মাস এ কর্মসূচি চলবে এবং এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কর্মীদের নিয়োগকর্তা থাকতে হবে। অবৈধ কর্মীরা আগে কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকলে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না। পরবর্তীতে অনিবন্ধিত নিয়োগ কর্তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো না করে সঠিক প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত হওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে সবাইকে। নিবন্ধনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় পড়বে ৩৪ হাজার টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পক্ষ থেকে গতকাল রাতে বলা হয়, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় যারাই যোগ্য তারাই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে। কোনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করা হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। দেশের বড় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ওপেন করতে হবে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় বায়রার মালয়েশিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ গিয়াস উদ্দিন বাবুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। আগামীকাল জি টু জি প্লাস সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে চলতি মাসের শেষের দিকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের এ্যাপ্রুভাল পাওয়া যাবে বলে মালয়েশিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন বাবুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা করে শত শত কর্মী অকালে প্রাণ হারিয়েছে। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার গভীর জঙ্গলে গণকবরেও অনেক কর্মীর স্থান হয়েছে। তিনি বলেন, আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হোক। পরে যোগ্য অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে। সাদিয়া রিক্রুটিং এজেন্সির শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় বৈধ পথে কর্মী যাওয়া সুযোগ নেই। তিনি বলেন, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীকাল জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী যাওয়ার কোনো প্রমাণাদি বায়রার সভাপতি দেখাতে পারেননি। এ প্রক্রিয়ায় যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে বলে নোমান উল্লেখ করেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় তিনি সরকারকে অভিনন্দন জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন