ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীরা সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাজার বছর ধরে নিঃস্বার্থে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মদিনা সনদ, হুদায়বিয়ার সন্ধিসহ বিদায় হজের ভাষণ এসবই শান্তির বার্তা। বর্তমানে বিধর্মীসহ শান্তির ধর্ম ইসলাম ধর্মালম্বীদের মাঝেও কিছু সামাজিক ব্যাধী লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে সমাজ অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির কালো ছায়ায় আচ্ছ্বাদিত হচ্ছে। তন্মধ্যে আত্মহত্যা ও যৌতুক উল্লেখযোগ্য। আজ রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুম্মার পূর্ব বক্তব্যে খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি সকলকে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতি সতর্ক করতে গিয়ে বলেন, আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ্, যার পরিণাম চিরস্থায়ী জাহান্নাম। যিনি আত্মহত্যা করছে কিংবা যার প্ররোচনায় আত্মহত্যার মত ঘৃনিত কাজ সংগঠিত হচ্ছে উভয়ই জাহান্নামী। লক্ষ্য করলে দেখাযায় আমাদের সমাজে যতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার সিংহভাগের সাথেই সমাজ ও পরিবারের মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, প্রত্যেক জীবরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকা উচিত যাতে আমাদের মৃত্যুটা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের মৃত্যুর মতো হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ (সূরা আন নিসা আয়াত-২৯,৩০)। আল্লাহ আরও বলেন, তোমরা নিজের হাতে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না (সূরা বাকারা-১৯৫)। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে। যে কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে দোজখেও সে নিজেকে একই শাস্তি দেবে (ছহীহ্ বুখারী)। আরো একটি বর্ণনায় আছে যে নিজেকে যে জিনিষ দ্বারা হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিষ দ্বারাই শাস্তি প্রদান করা হবে।
আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা এসকল আয়াত ও হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায়। এছাড়াও রাসূল (সা.) এর হাদীস ও পবিত্র কোরআনের আরো অসংখ্য জায়গায় নিজেকে ধ্বংস তথা আত্মহত্যার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আজকাল পত্রিকা, টিভিসহ সোস্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যা সম্পর্কে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ পাওয়া যায় । বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। যার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বখাটেদের উৎপাত, মা-বাবার ওপর অভিমান , পারিবারিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি, প্রেমে বিচ্ছ্বেদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি। তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নিরসনে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী পারিবারিক ও সামজিক জীবনে প্রচার করতে হবে। সেইসাথে যেসকল কারণ সমূহে অহরহ এহেন ঘৃনিত ঘটনা ঘটছে, সেগুলোও সমাজ থেকে বিতারিত করায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আত্মহত্যা নয় আত্মশুদ্ধিই মুক্তির একমাত্র মাধ্যম।
খতিব বলেন, আত্মহত্যাসহ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে আরো একটি কারণ “যৌতুক”। যা একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় যৌতুক নেয়া কবিরা গুনাহ্। ইসলাম যৌতুককে কখনোই সমর্থন করেনি বরং দেনমোহরকে বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে নানাভাবে যৌতুক প্রথা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং দেনমোহরের বিষয়টি অজ্ঞতা ও অবহেলায় কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। বিবাহের মত পবিত্র একটি বন্ধনের সূচনায়র শেকড় এমন অপবিত্র ঘটনার মাধ্যমে বপন হলে পরিণামতো ভয়াবহ হবেই। বর্তমানে অধিকাংশ সংসার টিকছেনা, টিকলেও কচুপাতার পানির মত। প্রায়শই মিডিয়ার মধ্যমে জানতে পারি যৌতুকের প্রহসনে সদ্য বিবাহীতা নববধুর আত্মহত্যার খবর। এসবই ইসলামী শরীয়াহ্ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে সংঘটিত হচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। যৌতুকও অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করারমত একটি বিষয়। পাশাপাশি যৌতুকের কারণে যেসকল অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে সেজন্যও যৌতুক গ্রহণকারী দায়ী। একইসাথে যৌতুক গ্রহণে উদ্বুদ্ধকারী ও সমর্থনকারীরাও জাহান্নামের ভয়বহ শাস্তি থেকে কখনই পরিত্রাণ পাবে না।
খতিব সকলকে আল্লাহর গজব ও আজাব থেকে রেহাই পাবার জন্য এবং সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আত্মহত্যা, যৌতুক, অন্যের হক ও সম্পদ ভক্ষন থেকে নিজেদের বিরত রাখার আহ্বান জানান। একই সাথে হতাশা, দুশ্চিন্তা, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অন্যায় ও গুনাহের পথ বেছে না নিয়ে ধৈর্য্যরে মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার পরামর্শ প্রদান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন