মুমিন মুসলমানের সপ্তাহিক ইবাদতে উপস্থিত হওয়ার দিন জুমা। দিনটি আল্লাহর কাছেও সবচেয়ে সেরা দিন। এ দিন মুসলিম উম্মাহর মাঝে দেখা যায় ঐক্যের প্রতীক। আল্লাহ তায়ালা মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে কিছু বস্তুকে অন্য বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি দিন তৈরি করেছেন সাতটি। তন্মধ্যে অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনকে শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। জুমার দিনের ফজিলতের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, পবিত্র কোরআনে জুমার নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।
জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যেদিনসমূহে সূর্য উদিত হয় তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমার দিন। যেদিন হজরত আদম (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল, অতঃপর যেদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে যেদিন তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করা হয়েছিল’ (মুসলিম: ৮৫৪, তিরমিজি: ৩৮৮)।
প্রথম হিজরিতে মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের নামাজের সময় হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ। (আল বিনায়াহ: ৩/৫৩)।
জুমার দিনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আমল : জুমার দিন ফজরের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ-লাম-মিম-সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহার তেলাওয়াত করা সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিন ফজরের নামাজে সূরা আলিফ-লাম-মিম সেজদা এবং সূরা দাহর পড়তেন। (বুখারী শরীফ ৮৯১)। সর্বদা জুমার দিন ফজরের নামাজে এই সূরাগুলো পাড়তে কোনো সমস্যা নেই, তবে কেউ যদি এমন আশঙ্কা করে থাকে যে, সর্বদা জুমার দিন ফজরের নামাজে এ দুটি সূরা পাঠ করতেই হবে, তাহলে মাঝে মধ্যে ইমাম সাহেব এই সূরাগুলো পাঠ করা ছেড়ে দিবে। কারণ এর স্থলে অন্য সূরা পড়াও জায়েয আছে।
সকাল সকাল মসজিদে গমন করা : হজরত আউস ইবনে আউস সাক্বাফি (রা.) বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে গোসল করবে, সকাল সকাল মসজিদে আসার জন্য রওয়ানা দিবে, পায়ে হেঁটে আসবে, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসবে, গুরুত্বসহকারে খুতবা শ্রবণ করবে এবং অহেতুক কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পূর্ণ এক বছর নফল রোজা ও এক বছর নফল নামাজ পড়ার সওয়াব দান করবেন।
সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা : জুমার দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সূরা কাহাফ’ তেলাওয়াত করবে, তাঁর জন্য এমন একটি নূর আলোকিত করা হবে, যা সে জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে। (সুনানে কুবরা ৩/৩৫৩)।
জুমার দিনে বিশেষ দুরূদ শরীফের আমল : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজের পর আপন স্থান থেকে ওঠার পূর্বে এই বিশেষ দুরূদ শরীফটি আশি বার পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর আশি বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে আশি বছর নফল ইবাদত করার সওয়াব দান করবেন। (আল ক্বাউলুল বাদী : ২৮৪)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন